করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান করার পর বাসায় ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৯টা ২২মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওয়ানা করেন খালেদা জিয়া।
পরে পৌনে দশটার দিকে তাকে বহনকারী গাড়িটি এভার কেয়ার হাসপাতালে প্রবেশ করে। দশটার দিকে তার সিটি স্ক্যান করা হয়। সাড়ে দশটার দিকে তাকে বহন করা গাড়ি বাসার উদ্দেশে রওয়ানা করে এগারোটার কিছু আগে গুলশানের বাসায় পৌছাঁয়। চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে আসার পর তার ব্যক্তিগত চিকিতসক টিমের প্রধান অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের কাছে ‘সিটি স্ক্যান’ করানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সেসময় তিনি বলেন, ম্যাডামের আজকে সেভেন ডে। কোভিডের পরিভাষায় ম্যাডাম এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে এন্ট্রি হচ্ছে। আমি আগেও বলেছি যে, কোভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। কোভিডের যত সাবধানতা, যত জটিলতা সেগুলো সাধারণত সেকেন্ড উইকে (সপ্তাহে) হয়। সেজন্য আমরা আরেকটু সাবধানতা অবলম্বন করতে চাই।
‘উনার সব পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধু সিটি স্ক্যানটা করানো হচ্ছিল না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, খুব দ্রুত স্বল্প সময়ের মধ্যেই সিটি স্ক্যানটা করিয়ে ফেলবো। এছাড়া উনার আর সব যেমন বায়ো কেমিক্যাল প্যারামিটারস, ফিজিক্যাল স্ট্যাটাস, অক্সিজেন স্যাচুরেশন এবং এপেটাইট, পালস, ব্লাড সার্কুলেশন অন্যান্য সব দিকে উনি- আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো আছে।’- যোগ করেন তিনি।
সেসময় খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা ভালো আছে উল্লেখ করে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, উনার নতুন যে একটু খানি উপসর্গ দেখা দিয়েছে সেটা হলো কালকে (বুধবার) রাতে উনার একটু জ্বর উঠেছিলো, ১০০‘র মতো ছিলো। আজকে (বৃহস্পতিবার) সকালেও উনার একবারের মতো একটু জ্বর উঠেছে, ১০০ টাচ করেছে। কিছুক্ষন জ্বর ছিলো।
লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্র বধু ডা. জোবাইদা রহমানমসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে যোগাযোগ করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে জানান এফএম সিদ্দিকী।
রোববার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরপরই সেদিন বিকালে বিশেষজ্ঞদের একটি টিম ফিরোজায় এসে খালেদা জিয়াকে দেখেন। চারদিন পর বৃহস্পতিবার তারা তার বিভিন্ন রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন। এদিন বিকাল ৪টায় চিকিৎসক টিমের সদস্যরা ‘ফিরোজায়’ প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন বিকাল ৫টার পর।
প্রসঙ্গত, গত ১১ খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিম বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা শুরু করে।
‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরো আট জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসাও এখানে চলছে।
৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়; শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।