বাংলাদেশে নিজেদের তৈরি ‘স্পুটনিক-ভি’ করোনা টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা জানিয়ে বলেন, প্রস্তাব অনুযায়ী রাশিয়া প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে আর বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ‘স্পুটনিক’ টিকা উৎপাদন করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি করার মতো পর্যাপ্ত উৎপাদন সক্ষমতা না থাকায় মস্কো বাংলাদেশে টিকাটি উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে।
আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিনের সহ-উৎপাদনে তাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছি। যদিও এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে- এটা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হবে এবং আশা করা যায় যে, এটা অপেক্ষাকৃত ভালো হবে।
সম্প্রতি ভারত রাশিয়ান স্পুটনিক ভি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পরায় টিকার অপ্রতুলতার কারণে এই অনুমোদন দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।
মন্ত্রী চীনের ভ্যাকসিনের বিষয়ে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন না থাকায় বাংলাদেশ এর আগে চীনের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা ভ্যাকসিনটি পেতে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
যদিও চীন বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে, তারা ইতোমধ্যেই তাদের ভ্যাকসিনটি অন্যান্য দেশে সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় ডিসেম্বরের আগে তারা আর কোনও ভ্যাকসিন রপ্তানি করতে পারবে না।
পাশাপাশি, সম্প্রতি বিশ্ব-ব্যাংক কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশকে আগামী মাসে ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেবে বলে জানিয়েছে। আমরা কোভ্যাক্সের আওতায় ওই ভ্যাকসিনগুলো পাব বলে আশাবাদী।
২১ জানুয়ারি, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসে। পাশাপাশি ভারত তার নেইবারহুড প্লাস পলিসির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ২০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাঠায়। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে উপহার স্বরূপ আরও ১.২ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পায়।
এই উপহার ছাড়াও, বাংলাদেশ ৫ নভেম্বর একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বিপিএল ও সেরাম ইনস্টিটিউ অব ইন্ডিয়া এসআইআই এর মধ্যে ১৩ ডিসেম্বর একটি চুক্তির আওতায় ৩০ মিলিয়ন ভারতে-উৎপাদিত ভ্যাকসিন ক্রয় করে।
চুক্তির আওতায়- প্রতি মাসে বাংলাদেশের ৫ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ৫ মিলিয়ন ডোজের প্রথম চালানটির পর ঢাকা দ্বিতীয় চালানটি পায়নি। মার্চ মাসে এই চালানটির আসার কথা ছিল।
মোমেন বলেন, ভারত আমাদের জানিয়েছে যে- তারা ভ্যাকসিন পাঠাবে। তারা কখনোই বলেনি যে- তারা ভ্যাকসিন পাঠাতে পারবে না।
ভারতে আশ্বাসে ঢাকার আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চুক্তির সময়সীমার মধ্যেই আমরা ৩০ মিলিয়ন ডোজের সব ভ্যাকসিন পাব বলে ঢাকা আশাবাদী।
মন্ত্রী বলেন, যদিও ঢাকা আশংকা করছে যে- ভারতে উৎপাদিত ভ্যাকসিন তাদের নিজ দেশের টিকার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ও বিদেশি দেশের সঙ্গে টিকা প্রদানে তাদের যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা পূরণে পর্যাপ্ত নয়। তারা সামর্থ্যের চেয়ে বেশি অর্ডার (ক্রয়আদেশ) নিয়ে ফেলেছে।