হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হককে আদালতে নেয়া হচ্ছে।
মারধর, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত গুরুতর জখম, চুরি, হুমকি ও ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলযোগের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় স্থানীয় এক ব্যক্তির করা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড শেষে আবারও তাকে আদালতে তোলা হচ্ছে।
গত ১৯ এপ্রিল এ মামলায় মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজেদুল হকের করা রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালত মামুনুলকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান।
ওইদিন শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো মামুনুল হককে আদালতে নেয়া কেন্দ্র করে যেকোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত পুলিশ সদস্যের বাইরে আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সাংবাদিক ও আইনজীবী ছাড়া অন্য কাউকে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আশপাশের সব দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম ও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসার দোতলার একটি কক্ষ থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রথমে তাকে মিরপুর সড়কে পুলিশের তেজগাঁও ডিভিশনের ডিসি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেখান থেকে মামুনুল হককে নেয়া হয় তেজগাঁও থানায়। সেখানে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে মামুনুলকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনাসহ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি এজাহারনামীয় আসামি।
এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সাম্প্রতিক মোদীবিরোধী আন্দোলনের সময় সহিংসতার মূল হোতা হিসেবেও মামুনুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর (ঝর্ণা) সঙ্গে অবস্থানকালে অবরুদ্ধ হন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। ওইদিন তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে শরিয়া আইন মোতাবেক ওই নারীকে তিনি বিয়ে করেন। যদিও পরবর্তীতে তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
অবরুদ্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই হেফাজত নেতারা ওই রিসোর্টে লাঠিসোটা নিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও নাশকতা চালিয়ে মামুনুল হককে মুক্ত করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মামুনুলে দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
ওইদিনই হেফাজতের নেতাকর্মীরা রিসোর্ট, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এছাড়া তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে।
পুলিশের ওপর হামলা ও রিসোর্টে ভাঙচুরের অভিযোগে মামুনুল হকসহ ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়। এছাড়া মামলায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়।
মামলায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও রিসোর্টে ভাঙচুরের অভিযোগ এনে ৪১ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাত ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় মামুনুল হককে প্রধান আসামি করা হয়।
এ মামলা ছাড়াও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে ৪২ জনের নাম উল্লেখ ও ২৫০/৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় হেফাজতে ইসলাম, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি নেতাকর্মীদেরও এজাহারভুক্ত করা হয়।