মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যু রহস্যের মধ্যেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৮ সদস্য ভাড়া করা বিমানে দেশ ছেড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৮ মিনিটে তাদের বহনকারী বিমান ভিপিসি-১১ দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে তারা দেশ ছাড়েন। মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের তিন দিনের মাথায় তারা দেশ ছাড়লেন। দুবাই তাদের প্রাথমিক গন্তব্য বলে জানা গেছে।
আনভীরের পরিবার কবে দেশে ফিরবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা না গেলও বিমানটি মে মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত ভাড়া করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানান, আনভীর পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে যাওয়ার আবেদন করে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটের অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। আবেদনে তারা ২৭ এপ্রিল দেশত্যাগের কথা বলেছিলেন। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত স্থগিত ছিল।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তাদের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটের অনুমোদন দেয়া হয়। সেই সঙ্গে ইমিগ্রেশনকে যাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা নেই তারাই কেবল ওই ফ্লাইটে যেতে পারবেন বলে জানিয়ে দেয়া হয়।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ওই চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, তাদের দুই সন্তান, ছোট ভাই সাফওয়ান সোবহানের স্ত্রী ইয়াশা সোবহান, তাদের মেয়ে ও পরিবারের তিনজন গৃহকর্মী ডায়ানা হার্নান্দেজ চাকানান্দো, মোহাম্মদ কাদের মীর ও হোসনে আরা খাতুন।
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে অপর একটি ফ্লাইটে আনভীরের ছোট ভাই সাফওয়ান সোবহানও দেশ ছাড়েন।
সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিঙ্গাপুর থেকে তাদের ভাড়া করা একটি প্লেন ঢাকায় আসে। পরে ভিপিসি-১১ ফ্লাইটে রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে তাদের নিয়ে ঢাকা ছাড়ে ফ্লাইটটি।
জানা গেছে, ওইদিন রাত ৮টায় আনভীরের পরিবারের ওই ৮ সদস্য বিমানবন্দরে পৌঁছে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। দুবাইয়ে গিয়ে তাদের সবার করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেয়ার কথা রয়েছে।
গত সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার রাতেই রাজধানীর গুলশান থানায় ৩০৬ ধারায় ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া’র অভিযোগে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর বিরুদ্ধে মামলা করেন মোসারাতের বড় বোন নুসরাত জাহান। মামলা নম্বর-২৭। এরপরই এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়।
এরইমধ্যে গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করে সায়েমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। তবে সায়েম সোবহান আদৌ দেশে আছেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তবে ইমিগ্রেশন পুলিশ বলছে, আনভীর দেশেই আছেন।
এদিকে গত বুধবার (২৮ এপ্রিল) হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন বসুন্ধরা গ্রপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই জামিন আবেদনের ওপর বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির কথা থাকলেও হাইকোর্ট আনভীরের জামিন শুনতে সম্মত হননি।
আদালতের শুরুতেই বিচারপতি মামনুন রহমান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাবস্থায় আমরা কোনও আগাম জামিন শুনবো না।’