জ্বালানি তেল উৎপাদক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাস আগামী ১ মে থেকে উত্তোলন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অটল। সংগঠনটির এই অবস্থানের কারণে গত মঙ্গলবার কিছুটা বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ভারতে করোনার ভয়াবহ আঘাতেও যে জ্বালানি তেলের চাহিদায় প্রভাব ফেলেনি এতে সেটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খবর রয়টার্স।
মধ্যপ্রাচ্যে তেল উৎপাদকদের সংগঠন ওপেক আর রাশিয়া ও তার মিত্র দেশগুলো একত্রে ওপেক প্লাস হিসেবে পরিচিত। গত বছর ওপেক প্লাসের সরবরাহ সংকোচনের ফলে ইতিহাসের সর্বনিম্নদাম থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। মে মাস থেকে উত্তোলন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও জ্বালানি খাতের বেশির ভাগ সংকট এখনো রয়েই গেছে।
জ্বালানি তেল উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গতকাল বুধবার (২৮ এপ্রিল) ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে গত সোমবার একটি টেকনিক্যাল বৈঠকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে বৈঠকে জ্বালানি তেলের চাহিদা যে অপরিবর্তিত থাকবে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ওই বৈঠক শেষে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেন, ১ এপ্রিল ওপেক প্লাসের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা অপরিবর্তিত রাখতে চাচ্ছে প্যানেলটি।
বুধবার অপরিশোধিত ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৭ সেন্ট বা ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ৪২ ডলার। ইউএস অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক শূন্য ৩ ডলার বা ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৯৪ ডলার।
ভারতে চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে ওপেক প্লাসের সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল আগামী ১ মে থেকে উত্তোলন বাড়াবে তারা। কিন্তু বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশটিতে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের হার কয়েক দিন ধরে তিন লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রিতারবুশ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রেসিডেন্ট জিম রিতারবুশ জানান, এশিয়ার বাজারে চাহিদার শ্লথগতির সামনে ওপেক প্লাসের তেল উত্তোলন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বেশ দৃষ্টি আকর্ষণীয়। গত বছর তেল উত্তোলন কমিয়ে দাম চাঙ্গা করার প্রয়াস কিছুটা সফল হলেও এবার উত্তোলন বাড়িয়ে দাম কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তা দেখার বিষয়।
ইউবিএস জিডব্লিউএমের বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাওনোভো বলেন, উত্তোলন কিছুটা বাড়ানোর মাধ্যমে সতর্ক পায়ে এগোচ্ছে ওপেক প্লাস। আমরা আশা করছি চলতি বছর প্রতিদিন তেল উত্তোলন ১৫ লাখ ব্যারেলে দাঁড়াবে। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ব্রেন্টের দাম দাঁড়াবে ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলার।
এক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ঘটনা হচ্ছে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি কার্যকরে পশ্চিমা শক্তির ঐকমত্য। ভিয়েনা বৈঠক শেষে চুক্তিটি ফের কার্যকর হলে তা বৈশ্বিক তেল সরবরাহে ভূমিকা রাখবে।