হেফাজতে ইসলামের নেতা ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করার পরই তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে মেডিকেল টেস্টের জন্য নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকালে ঝর্ণাকে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নেয়া হয়।
এর আগে সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামুনুলের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় মামলা করেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। মামলার নম্বর ৩০।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু। সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করবেন।
মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণা (২৭) ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার কামারগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ওলিয়ার রহমানের মেয়ে।
মামলার এজাহারে মামুনুলের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে জান্নাত আরা ঝর্ণা বলেন, মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয়ের আগে তাদের দুই সন্তান আবদুর রহমান (১৭) ও মোহাম্মদ তামিম (১৩) নিয়ে সুখী ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন চলছিল। পরিচয়ের পর থেকে মামুনুল তাদের (ঝর্ণা) বাসায় অবাধ যাতায়াত করতেন। এক পর্যায়ে তার ওপর মামুনুলের খারাপ দৃষ্টি পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাটো মতানৈক্যের মধ্যে কৌশলে প্রবেশ করে মামুনুল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করেন।
মামলার অভিযোগে বিচ্ছেদ বিষয়ে ঝর্ণা বলেন, মামুনুল হকের কুপরামর্শে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর আমার অসহায়ত্বের সুযোগে মামুনুল হক আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পরে তার পরামর্শে আমি ঢাকার কলাবাগানে সাবলেট হিসেবে ভাড়া নিয়ে একটি বাড়িতে বসবাস করতে থাকি এবং একটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি। আমার বাসা ভাড়া ও ভরণপোষণ বহন করেন মামুনুল হক। এক পর্যায়ে তিনি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
এজাহারে আরও বলা হয়, দুই বছর ধরে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে মামুনুল আমাকে বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে নিয়ে রাত্রিযাপন ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে যৌন লালসা চরিতার্থ করতেন।
অভিযোগে ঝর্ণা আরও বলেন, সবশেষ গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁও রয়্যাল রিসোর্টে তিনি আমাকে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি।
এজাহারে জান্নাত বলেন, সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁ রয়্যাল রিসোর্টে তিনি আমাকে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি।
গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর (ঝর্ণা) সঙ্গে অবস্থানকালে অবরুদ্ধ হন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। ওইদিন তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে শরিয়া আইন মোতাবেক ওই নারীকে তিনি বিয়ে করেন। যদিও পরবর্তীতে তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এদিকে মতিঝিল ও পল্টন থানায় করা নাশকতার পৃথক দুই মামলায় গত ২৬ এপ্রিল মামুনুলকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালত।
এর আগে মারধর, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত গুরুতর জখম, চুরি, হুমকি ও ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলযোগের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় স্থানীয় এক ব্যক্তির করা মামলায় গত ১৯ এপ্রিল মামনুলকে ৭ দিনের রিমান্ড পাঠিয়েছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালত।