করোনার ভয়াবহতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তায় ‘কান দেয়নি’ ভারত করোনার ভয়াবহতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তায় ‘কান দেয়নি’ ভারত – Sabuj Bangla Tv
  1. shahinit.mail@gmail.com : admin :
  2. khandakarshahin@gmail.com : সবুজ বাংলা টিভি : সবুজ বাংলা টিভি
  3. wpapitest@config.com : wpapitest :
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন
নোটিশ-
বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন টিভি চ্যানেল সবুজবাংলা টিভি এর জেলা/উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

করোনার ভয়াবহতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তায় ‘কান দেয়নি’ ভারত

সবুজ বাংলা টিভি
  • প্রকাশ কাল | সোমবার, ৩ মে, ২০২১
  • ২১০ পাঠক

করোনার ভয়াবহতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তায় ‘কান দেয়নি’ ভারত

গত মার্চের শুরুতেই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের গঠন করা একটি ফোরাম ইন্ডিয়ান সার্স-সিওভি-২ জেনেটিকস কনসোর্টিয়াম (আইএনএসএসিওজি) সতর্ক করেছিল, ভারতে অতি সংক্রামক করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।

তবে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন এ ধরনটি নিয়ে সতর্ক করা হলেও সরকার তা ‘উপেক্ষা’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সরকারের গঠিত বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ফোরাম ইন্ডিয়ান সার্স-সিওভি-২ জেনেটিকস কনসোর্টিয়ামের (আইএনএসএসিওজি) ৫ বিজ্ঞানী।

অতি সংক্রামক এ ধরন ছড়িয়ে পড়ায় ভারতে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বর্তমানে সতর্কতায় ‘কান না দেয়ারই’ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে দেশটিকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিজ্ঞানীদের ৪ জন জানান, তাদের এ সতর্কবার্তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার ভাইরাসের বিস্তার রোধে কঠোর বিধিনিষেধ দিতে আগ্রহী হয়নি।

রয়টার্স বলছে, সংক্রমণ রোধে বিশেষজ্ঞরা এপ্রিলের শুরু থেকেই ভারতজুড়ে লকডাউন আরোপের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে অন্তত চারজন বিজ্ঞানী বলেছেন, ভারত সরকার তাদের সেই আহ্বান শোনেনি। উল্টো লাখ লাখ মানুষের মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব না মেনে ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করার কয়েক সপ্তাহ পরও দেশটির লাখ লাখ মানুষকে মাস্ক ছাড়াই কুম্ভমেলার মতো বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিরোধী দলগুলোর নেতারাও একের পর এক সভা-সমাবেশে করেছেন।

মোদী সরকারের করা ৩টি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে রাজধানী নয়া দিল্লির প্রান্তে লাখো কৃষকের কয়েক মাসের অবস্থান কর্মসূচিও চলছে। এসবের ধারাবাহিকতা ও সরকারের উদাসীনতায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশটি এখন সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।
অন্য দেশগুলোর তুলনায় ভারত দেশব্যাপী দুই মাসের কঠোর লকডাউন দিয়ে মহামারির প্রথম ঢেউ বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্ত রোগীর ঊর্ধ্বগতি দেশটির অনেক রাজ্যেই হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেনের সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, পাওয়া যাচ্ছে না ওষুধও।

বিজ্ঞানীদের অনেকেই এ পরিস্থিতির জন্য ভারতে শনাক্ত ধরন ও যুক্তরাজ্যে শনাক্ত আরেকটি বেশি সংক্রামক ধরনকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, এ দুটি ধরনের আধিপত্যের কারণেই ভারতের একাধিক রাজ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে ভারত সরকার করোনাভাইরাসের কোন ধরনটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে তা শনাক্ত করতে বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টাদের ফোরাম আইএনএসএসিওজি গঠন করেছিল। ফোরামটি ভাইরাসের ধরন নিয়ে গবেষণায় সক্ষম এমন ১০টি গবেষণাগারকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসে।

আইএনএসএসিওজি’র গবেষকরাই ফেব্রুয়ারিতে প্রথম করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন নামে পরিচিত বি.১.৬১৭ ধরনটি শনাক্ত করেন বলে জানান ভারতের রাষ্ট্র-পরিচালিত ইনস্টিটিউট অব লাইফ সায়েন্সের পরিচালক ও আইএনএসএসিওজ ‘র সদস্য অজয় পারিদা।

বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টাদের এ ফোরাম ১০ মার্চের আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলকে ধরনটির ব্যাপারে জানায় এবং ভারতজুড়ে শিগগিরই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যেতে পারে বলে সতর্ক করে, জানিয়েছেন উত্তর ভারতের একটি গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক।

এ সতর্কবার্তা পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়কে জানানোর পাশাপাশি একই সময়ে গণমাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতির খসড়ার কাজও শুরু করে আইএনএসএসিওজি। সেখানে গবেষকদের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় ধরনটির দুটি মিউটেশন ই৪৮৪কিউ ও এল৪৫২আর নিয়ে ‘ব্যাপক উদ্বেগ’ জানানো হয়।

রয়টার্সের দেখা এ খসড়া বিবৃতিতে মিউটেশনগুলো তুলনামূলক সহজেই মানবকোষে প্রবেশ করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল।

দুই সপ্তাহ পর, ২৪ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গবেষকদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে বিবৃতি দিলেও তাতে ‘ব্যাপক উদ্বেগের’ বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বেশি সংক্রামক ধরনের মোকাবেলায় যে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেগুলো নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিনের পরিমাণ বাড়ে।

বিজ্ঞানীদের এমন সতর্কতার পরও সরকার কেন বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কঠোর সব ব্যবস্থা নেয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে আইএনএসএসিওজি’র চেয়ার শহীদ জামিল বলেন, কর্তৃপক্ষ যে কোভিড মোকাবেলার নীতি ঠিক করার সময় তথ্য উপাত্তের দিকে পর্যাপ্ত নজর দেয়নি, এটাও তাকে উদ্বিগ্ন করছে।

তিনি বলেছেন, “নীতি হওয়া উচিত তথ্যউপাত্তের উপর ভিত্তি করে, অন্য কোনোকিছুর ভিত্তিতে নয়। (কোভিড মোকাবেলার) নীতির ক্ষেত্রে যে বিজ্ঞানকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না তাতে আমি উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমি জানি আমার সীমা কতটুকু। বিজ্ঞানী হিসেবে আমরা তথ্যউপাত্ত হাজির করতে পারি, নীতি তৈরি করা সরকারের কাজ।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর ভারতের গবেষণা কেন্দ্রের এক পরিচালক জানান, গণমাধ্যমের জন্য বানানো তাদের খসড়া বিবৃতিটি ভারতের মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজিব গওবাকেও পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি জানানোর এখতিয়ার এই ঊর্ধ্বতন আমলার থাকলেও আইএনএসএসিওজ ‘র ওই সতর্কবার্তাটি মোদীর কাছে কিংবা তার কার্যালয়ে পৌঁছেছিল কিনা রয়টার্স তা নিশ্চিত হতে পারেনি। এ বিষয়ে গওবা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্তব্য চাওয়া হলেও তাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, আইএনএসএসিওজি‘র পক্ষ থেকে ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হলেও তারা ভারতীয় ধরনটির বিস্তার রোধে পর্যাপ্ত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি, যার ফলশ্রুতিতে এপ্রিলের ১ তারিখেই এক মাস আগের তুলনায় ৪ গুণ বেশি কোভিড রোগী মেলে।

অনেক বিজ্ঞানী অবশ্য বলছেন, ভারতের সংক্রমণ পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে তা তারাও ধারণা করতে পারেননি। তাই কেবল রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দোষারোপ করাটা ঠিক হবে না বলেও মত তাদের।

ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জেনোমিক্সের পরিচালক সৌমিত্র দাস বলছেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়ে শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। কেননা, এখন সংক্রমণ যে হারে ছড়াচ্ছে, তা অনেক বিজ্ঞানীও অনুমান করতে পারেননি।’

তবে সরকারের অনেক কর্মকর্তা এপ্রিলেই সংক্রমণ মোকাবেলায় লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছিলেন।

আইএনএসএসিওজি নয়াদিল্লির যে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলকে (এনসিডিসি) প্রতিবেদন পাঠায়, তাদের পরিচালক সুরজিৎ সিং এক অনলাইন বৈঠকে এপ্রিলের শুরুতেই কঠোর লকডাউন দেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন। “আমাদের ভাবনা অনুযায়ী, আরও ১৫ দিন আগে (লকডাউন) দেওয়া উচিত ছিল,” ১৯ এপ্রিলের ওই বৈঠকে এমনটাই বলেছিলেন এনসিডিসির এই পরিচালক।

তার আগের দিন এক বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তাদেরকে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ও বিপুল মৃত্যু রুখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছিলেন বলেও অনলাইনে উপস্থিত অন্যদের বলেন সুরজিৎ।

অক্সিজেনের মতো জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতি দেখা দিলে মাঝারি আকৃতির বিভিন্ন শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে ১৮ এপ্রিলের বৈঠকে অনেক সরকারি কর্মকর্তাও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে সেদিনের ওই বৈঠকে কোন কোন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, সুরজিৎ তা জানাননি।

১৫ এপ্রিল ভারতের ন্যাশনাল টাস্কফোর্স ফর কোভিড-১৯ ‘পরিস্থিতি গুরুতর এবং লকডাউন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়’ বলে সর্বসম্মত অবস্থান ব্যক্ত করেছিল বলেও জানান তাদের আলাপে অংশ নেওয়া এক বিজ্ঞানী।

ওই মতবিনিময়ে মোদীর করোনাভাইরাস বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা ভি কে পলও ছিলেন, তিনি ভারতের ন্যাশনাল টাস্কফোর্স ফর কোভিড-১৯ এরও প্রধান। পল ওই আলাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু জানিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রয়টার্স এ প্রসঙ্গে মন্তব্য চাইলেও পলের দিক থেকে সাড়া মেলেনি।

সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বৈঠকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ নিয়ে আলাপ আলোচনা চললেও ২০ এপ্রিল জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মোদী লকডাউনের বিপক্ষে অবস্থান নেন। গত বছরের লকডাউনে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি ও লাখ লাখ লোককে বেকার হয়েছিল বলেও যুক্তি দেন তিনি।

তিনি বলেছিলেন, “লকডাউনের হাত থেকে আমাদের দেশকে বাঁচাতে হবে। রাজ্যগুলোকেও আমি শেষ বিকল্প হিসেবে লকডাউনকে দেখতে অনুরোধ করবো। আমাদের উচিত লকডাউন এড়িয়ে সংক্রমণের হার বেশি এমন ছোট ছোট এলাকাকে অবরুদ্ধ করার দিকে মনোযোগ দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।”

তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে মোদীর এসব পরামর্শ খুব একটা কাজে লাগছে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। ভারতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা সেটাই বলছে। মহারাষ্ট্র ভারতের দ্বিতীয় জনবহুল রাজ্য। করোনা সংক্রমণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার হাসপাতালগুলোয় শয্যা ও অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল থেকে মুম্বাইসহ পুরো মহারাষ্ট্রে লকডাউন আরোপ করেছে রাজ্য সরকার।

ভারতের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির পরিচালক রাকেশ মিশ্র আইএনএসএসিওজির সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীরা বেশ ভালো কাজ করেছিলেন। কিন্তু সময় মতো তাদের সুপারিশ মানেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এখন কয়েকটি রাজ্য ঠিক সেই পথে হাটতে বাধ্য হচ্ছে।

অন্যদিকে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেসের বিজ্ঞানী শান্তা দত্ত আক্ষেপ করে বলেন, মানুষ বিজ্ঞানীদের চেয়ে রাজনীতিকদের কথা বেশি শোনে। আমরা এখন খুবই মারাত্মক পরিস্থিতিতে আছি।’

আমাদের সংবাদটি শেয়ার করুন..

এ পাতার আরও খবর

Sabuj Bangla Tv © All rights reserved- 2011| Developed By

Theme Customized BY WooHostBD