ফিলিস্তিনের জেরুজালেম ও গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ইসরায়েলি নির্যাতন বন্ধ ও দখলদারিত্ব অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
সোমবার (১৭ মে) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান হেফাজত আমির।
জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল আকসাকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েল পুরো রমজান মাসজুড়েই সহিংসতার কেন্দ্রস্থলে পরিণত করে রেখেছে। বিশেষত, রোববার সন্ধ্যা থেকে আল-আকসায় নামাযরত মুসল্লিদের ওপর বর্বরোচিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি দখলদাররা।’
তিনি বলেন, ‘গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, রোববার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবে শহীদ ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ৫৩ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন তিনশ’র বেশি ফিলিস্তিনি। শহীদদের মধ্যে ১৪ শিশু ও ৩ জন নারীও রয়েছেন।’
বাবুনগরী বলেন, এ ধরনের হামলা চালিয়ে ইসরাইল সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি ভঙ্গ করছে এবং একইসাথে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। অথচ জাতিসংঘসহ ওআইসি, আরব দেশসমূহ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় লোকদেখানো কিছু বুলি আওড়ানো ছাড়া ইসরাইলী সন্ত্রাস থেকে ফিলিস্তিনীদের রক্ষায় কার্যকর কিছুই করছে না। কার্যত, তারা অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে নীরবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ ক্রমেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ আরো নিরঙ্কুশ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে প্রতিদিন নতুন নতুন ফিলিস্তিনী এলাকা দখলে নিচ্ছে ইসরাইল। তাদের নিজ এলাকা থেকে বিতাড়িত করে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন ইহুদি বসতি। ফিলিস্তিনিরা রক্ত ঝরিয়ে প্রতিবাদ করছেন বটে। কিন্তু সন্ত্রাসী কায়দায় সেই প্রতিবাদ দমন করছে ইসরাইল।
বিশ্বমোড়ল দেশসমূহের কঠোর সমালোচনা করে হেফাজতের সাবেক আমীর বলেন, মানবাধিকার প্রশ্নে তাদের দ্বিমুখী নীতির কারণে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনীদের সকল অধিকার ভূলুণ্ঠিত ও তাদের খুন করে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। পশ্চিমা এসব মোড়লরা মানবাধিকারের ভূয়া অভিযোগ তুলে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও সুদানের মতো বহু মুসলিম দেশকে তছনছ করে দিয়েছে, অথচ ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে তারা প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলের সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় থেকে তারা কোনভাবেই মুক্ত নয়।
হেফাজত আমীর একই সাথে ওআইসি, আরব লীগ ও মুসলিম দেশসমূহের নতজানু নীতি ও পারস্পরিক অনৈক্যে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ওআইসি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ফিলিস্তিনীদের স্বাধীকার প্রতিষ্ঠা ও মসজিদুল আকসাকে দখলদার মুক্ত রাখার প্রত্যয় নিয়ে। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলিদের লাগাতার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ওআইসির ধারাবাহিক নিরবতা সংস্থাটির কার্যকারিতাকে প্রশ্নের মুখে নিয়ে যায়। আরব দেশসমূহের শাসকরাও উম্মাহ চেতনাবোধ থেকে বহু দূরে সরে পড়েছে। একইভাবে আরব জাতীয়তাবাদের চেতনাও তাদের মাঝে অনুপস্থিত। মুসলিম উম্মাহর উচিত, মসজিদুল আকসা ও ফিলিস্তিনের আরব ভূমি মুক্ত করতে সোচ্চার জনমত তৈরি করা, যাতে নিজ নিজ দেশের শাসক মহল এ বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিতে বাধ্য হয়।
আল্লামা বাবুনগরী চলমান ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবাদি অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর চাপ তৈরির আহ্বান জানান।
পাশাপাশি তিনি দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ওলামায়ে কেরামকে মুক্তিদান ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান।