বাংলাদেশি এক তরুণীকে ভারতের কেরালা রাজ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিসি শহিদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশি ওই তরুণীকে নির্যাতনকারী ৫ জনকে ভারতীয় পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। এ সংক্রান্ত হাতিরঝিল থানায় মানবপাচারকারী আইন ও পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে চেষ্টা করবো গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের দেশে ফিরিয়ে এই মানব পাচারকারী চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।’
গেল কয়েকদিন ধরে ভারতের কেরালা রাজ্যে বাংলাদেশি ওই তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তেজগাঁও বিভাগের নজরে আসে।
ডিসি শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আনুমানিক ২০-২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে ৩-৪ জন যুবক অমানুষিকভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ধারণ করা ভিডিওটির একজন নির্যাতনকারীর সঙ্গে রাজধানীর মগবাজার এলাকার একটি ছেলের ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ছবির সঙ্গে মিলে গেলে এ নিয়ে তদন্তে নামে তেজগাঁও পুলিশ।’
তিনি জানান, পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, নির্যাতকারী ওই যুবকের নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয়। সে রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। রিফাতুলের পরিচয় তার মা ও মামার কাছ থেকেও শনাক্ত করা হয়। স্থানীয় এলাকায় সে টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত। এছাড়া মেয়েটির বাবা-মাকেও খুঁজে বের করে পুলিশ। মেয়েটির বাবা-মা পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশকে জানায়, তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তাদের মেয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় থাকতো।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় মেয়েটির বাবা ডিএমপির হাতিরঝিল থানায় বাদী হয়ে নির্যাতনের ঘটনায় মানবপাচার আইন ও পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মেয়েটির বাবা মগবাজার এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন। তার মেয়ের ৬-৭ বছর আগে বিয়ে হয়। স্বামী ৩ বছর ধরে কুয়েতে থাকে। স্বামীর বিদেশ থাকাকালে মেয়েটি বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি দুই জায়গাতেই থাকতো। ১৫ মাস আগে সে তার বাবাকে জানায়, সে দুবাই যাবে। কিন্তু বাবা তাকে নিষেধ করে। তবে এক বছর ধরে সে নিখোঁজ হয়ে যায়।
মামলার বাদী আরও জানান, পরে তিনি জানতে পারেন, মগবাজারের রিফাতুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় তাকে ফুসলিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে পাচার করে। কিছুদিন আগে তিনি জানতে পারেন, তার মেয়ে হৃদয়ের সঙ্গে ভারতে আছে। তবে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বাদী তার মেয়েকে চিনতে পারেন। ভিডিও দেখে রিফাদুলকেও শনাক্ত করেন মেয়েটির বাবা।
এজাহারে ভিডিওতে করা নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশীদ বলেন, ‘ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। এখন আমরা তদন্ত শুরু করবো। ভুক্তভোগীকে দেশে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। এছাড়া আসামিদেরও ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে দেশে ফেরানো হবে।’