করোনাভাইরাসের প্রথম আঘাতে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন ভারতীয় নারীরা। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড়ে এ বছরও দ্বিতীয়বারের মতো তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হন। কম বেতন থেকে শুরু করে চাকরি হারানো পর্যন্ত। সেটাও ভারতীয় পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষতির মাত্রা মারাত্মক ছিল।
পাশাপাশি ধীরগতির টিকাদানে নারীদের মৃত্যুর হারও বেড়েছে। এছাড়া বাড়িতে কাজ করা গৃহিণী ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্যারামিটারগুলোয় বিশ্বজুড়ে নারীদের তুলনায় তারা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আর এটা সামগ্রিকভাবে দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ক্রমবর্ধমান এ বৈষম্য কেবল সমতার অগ্রগতিকেই বাধা দিচ্ছে না, এটা উৎপাদনশীলতাও কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে গত বছরের অভূতপূর্ব মন্দা থেকে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে ধীর পুনরুদ্ধারের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
২০২০ সালের তুলনায় গত কয়েক মাসে ভারত ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের মুখোমুখি হয়। রেকর্ড সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। সংক্রমণ রোধে রাজ্য সরকারগুলো প্রাদেশিক লকডাউন জারি করে। ফলে থমকে যায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
এতে গত দুই মাসে ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ভারতীয় চাকরি হারিয়েছেন। এ প্রভাব নারীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক ছিল। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি প্রাইভেট লিমিটেডের (সিএমআইই) তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেকারত্বের হার দ্বিগুণ বেড়ে ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
সিএমআইইর তথ্য বলছে, চাকরি হারানো অনেক নারী আর নতুন চাকরির সন্ধান করেননি। গবেষণা সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহেশ ভিয়াস বলেন, মহামারীর অর্থনৈতিক ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যুবক ও নারীরা।
তারা জানিয়েছে, এ ধরনের পরিবেশে চাকরি করা খুব কঠিন। আপনাকে অনেক ভ্রমণ করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার শঙ্কাও আছে। এ সমস্যা সমাধানে নারীদের নিরাপদে বাইরে যেতে এবং নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম করে তোলার অবকাঠামো থাকতে হবে।
যেসব নারী নিজেদের চাকরি টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন, তাদের অনেককেই মজুরি কমাতে হয়েছিল। ভারতে ব্যাপক সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের আয়েও মারাত্মক পতন ঘটে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারি নিয়ন্ত্রণে জারি করা লকডাউনের কারণে নারীদের সাপ্তাহিক আয় ৭৬ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। তাদের সঞ্চয় কমে গেছে এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো ভারতীয় নারীদের কাজ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছিল। এসব ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে নারীরা যে প্রভাব অনুভব করেছিল, ভারতীয় নারীদের ক্ষেত্রে তা আরো মারাত্মক ছিল। এটা ভারতের নারী-পুরুষের ব্যবধানকে আরো প্রশস্ত করতে পারে। দেশটিতে এক-চতুর্থাংশেরও কম নারী শ্রমশক্তিতে রয়েছেন, যা বিশ্বের সবচেয়ে কম হারের একটি। যদিও দেশটির প্রায় ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। আর শ্রমশক্তিতে থাকা নারীরাও পুরুষদের তুলনায় গড়ে ৩৫ শতাংশ কম আয় করেন।
এসবের বাইরে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা দেয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছেন নারীরা। নাজের সমীক্ষা অনুসারে, ৮৫ শতাংশ নারী টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে সচেতন রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কেবল ৩৯ শতাংশ নারী টিকা দিতে ইচ্ছুক।
নারীদের মধ্যে টিকাদানে দ্বিধা থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাচার স্কুলের গ্লোবাল বিজনেস বিভাগের ডিন ভাস্কর চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সেলফোন ব্যবহার পর্যন্ত অনেক পরিষেবায় নারীদের অংশগ্রহণ পরিবারের সবার পেছনে থাকে। পরিবারের ঐতিহ্যবাহী যত্নশীলের দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে নারীরা নিজের চেয়ে অন্যের প্রয়োজন মেটাতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন কিংবা পুরুষদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কারণে তাদের এমনটা করতে হয়। খবর ব্লুমবার্গ।