লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল ভয়াবহ পানি সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৯১ বছরের ইতিহাসে এবারই দেশটি এত তীব্র পানি সংকটে রয়েছে। ফলে ব্যাহত হতে পারে দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ সংকটের কারণে দেশটির অর্থনীতি বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে পারে, জানিয়ে সতর্ক করছে সরকার। করোনার প্রভাব ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠার এ সময়ে নতুন সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি। খবর ব্লুমবার্গ।
সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে ব্রাজিলের জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী বেন্টো আলবুকার্ক বলেন, গত ৯১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পানি সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে ব্রাজিল। ২১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার এ দেশ পানির ওপরই বেশি নির্ভরশীল। দেশটির ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ হাইড্রোইলেকট্রিসিটি-কেন্দ্রিক বলেও জানান তিনি।
এর আগে ২০০১ সালেও ব্রাজিল ভয়াবহ পানি সংকটের মুখে পড়েছিল। সে সময় খরার কারণে জলাধারগুলোর সংরক্ষিত পানির পরিমাণ খুবই নিচে নেমে গিয়েছিল। যা ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানাসহ অন্যান্য জ্বালানি উৎপাদন খাতকে প্রভাবিত করে।
তখন থেকে দেশটি তাদের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে ট্রান্সমিশন লাইনের সঙ্গে সংযোগ করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ করে এবং তাদের থার্মোইলেকট্রিক জেনারেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের জন্য যে দেশ পানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এটি অনেক বড় একটি দুর্যোগ।
কৃষি খাতের দিক থেকে ব্রাজিল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র। অতিরিক্ত খরার কারণে কৃষকরা এখন তাদের শস্য বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে শঙ্কায় ভুগছেন। কারণ এ সময়ের মধ্যে তাদের সংরক্ষিত পানিও শেষ হয়ে যাবে, যার কারণে কফি থেকে শুরু করে চিনি, অরেঞ্জ জুস ও সয়াবিনের রফতানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এই কঠিন সময়ে বিদ্যুৎ বিল ও খাবারের দাম আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ বর্তমানে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমানের চেয়েও দ্বিগুণ হয়েছে।
করোনা-পরবর্তী সময়ে ব্রাজিলের বাজার ব্যবস্থায় ধস নামে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাজার ব্যবস্থায় আরো বিরূপ প্রভাব ফেলে। এমন মুহূর্তে পানির সংকট ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
আলবুকার্ক জানান, চলতি বছর ব্রাজিল সরকার নিলামের মাধ্যমে আরো বেশকিছু প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালুর ব্যাপারে কাজ করছে। সেই সঙ্গে থার্মোইলেকট্রিক জেনারেশনের কারণে চলতি বছর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি জরুরি এক সভায় দেশটির জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা খরার সময় জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের পানির উচ্চতা ধরে রাখার ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান। আগস্টের শেষ পর্যন্ত এ খরা অব্যাহত থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।