আদালতে জবানবন্দি দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করেছেন চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার।
মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় এ জিডি করেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কি বলেন, ‘পান্না আক্তার নামে এক নারী নিজের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ জায়েরি করেছেন। আইন অনুযায়ী আমরা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।’
জিডির বিষয়ে পান্না আক্তার বলেন, ‘জবানবন্দি দেয়ার পর আমার ভেতরে ভয় কাজ করছে। এজন্য আমি থানায় জিডি করেছি।’
এর আগে গতকাল সোমবার (৩১ মে) বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন পান্না আক্তার।
তিনি মামলার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান আদালত প্রসিকিউশন শাখার কর্মরত পাঁচলাইশ থানার জিআরও এসআই শাহীন ভূঁইয়া।
তবে জবানবন্দিতে মিতু হত্যায় বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততার কথা পান্না আক্তার জানিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।
এই পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, ‘পান্না আক্তার মিডিয়ায় বলে আসছেন মিতু হত্যায় বাবুল আক্তার সম্পৃক্ত। তার স্বামী মুছাকে দিয়ে মিতুকে হত্যা করিয়েছেন বাবুল। তিনি এতদিন মিডিয়ায় যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটিই জবানবন্দিতে বলেছেন। আমি এখনও স্টেটমেন্টেটর (জবানবন্দি) কপি পাইনি। সেটি পেলে বিস্তারিত জানানো যাবে।’
এর আগে গেল ২৫ মে সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালতে মোখলেসুর রহমান ইরাদ নামে এক ব্যক্তি জবানবন্দি দেন।
পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার জানান, এ মামলায় তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ইরাদ। এর আগে সাইফুল ইসলাম ও কাজী মামুন নামে আরও দুই সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সে হিসেবে মিতু হত্যা মামলায় মুছার স্ত্রী পান্না আক্তারসহ এ পর্যন্ত মোট ৪ জনের সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ৫ জনু ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁচে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনার পর তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
তবে বাবুলের শ্বশুর অর্থাৎ মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এ হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছিলেন।
চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) শুরু থেকেই মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার দেয় পুলিশে ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এরপরই ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে দেশজুড়ে তোলপাড় তোলা চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলার জট।
এরইমধ্যে গেল ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই।
একই দিন দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি ৭ আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও শাহজাহান মিয়া।