সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জে যাত্রীবেশে একটি চক্র মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয় এমন অভিযোগ ওঠলে নড়েচড়ে বসে থানা পুলিশ। অবশেষে চক্রের মূলহোতা ও দুটি মোটরসাইকেলসহ সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার (৩১ মে) সাইফুর রহমান ডিগ্রী কলেজের সামন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, রাইড শেয়ারিং করতেন কোম্পানীগঞ্জের দয়ারবাজার এলাকার বিল্লাল আহমদ নামের এক যুবক। গত ১০ মে সন্ধ্যায় ছদ্দবরণে যাত্রীবেশী এক ছিনতাইকারী ভাড়ায় বুড়িডহর গ্রামে যাওয়ার জন্য ৩৫০ টাকায় চুক্তি করে। কথামতো সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে যাওয়ামাত্র অজ্ঞাতপরিচয় দুই ছিনতাইকারী রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীসহ তিনজনে মিলে ছুরি দিয়ে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে বিলাল আহমদের মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নেয়। এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন বিল্লাল।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে সজল আহমদ (২৪), সিলেট সদরের শাহপরাণ থানাধীন ইসলামপুর এলাকার মৃত বদরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম রায়হান (২০), একই থানার সুরমা গেট এলাকার বশির আহমদের ছেলে আল আমিন হোসেন শিমুল (২০), একই এলাকার আব্দুল মোতালেবর ছেলে জিহাদ (২০), কানাইঘাট থানাধীন ঢালাইচর গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে আলী হোসেন জনি (২৪), শিবনগর গ্রামের এবাদত রহমানের ছেলে মারুফ আহমদ (২৭) এবং শ্রীপুর গ্রামের মৃত কুতুব আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন দুলাল।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সজল আহমদ সরাসরি ছিনতাইর ঘটনায় জড়িত। অপর আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল একে অপরে কাছে বিক্রি করেছে। ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেলটি অভিযুক্ত মারুফের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়। আসামি আল আমিন শিমুলের তথ্যের ভিত্তিতে অপর একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। যেটি আপাতত চোরাই মটর সাইকেল হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে শেখ খায়রুল ইসলাম রায়হান, আল আমিন হোসেন শিমুল ও সজল আহমদ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তাদের মধ্যে রায়হান ও শিমুল সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলামের অনুসারী। নাজমুল ইসলাম সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিত সরকার গ্রæপের নেতা।
অপর একটি সূত্র জানায়, নাজমুল ইসলাম মূলত সিলেটের টিলাগড় কেন্দ্রিক ত্রাসের রাজত্ব। এতে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন এলাকার উঠতি বয়সী তরুণ ও যুবক, ছিনতাইকারী ও চাদাবাজি মামলার আসামীরা। রাজনীতির ছত্র ছায়ায় এসব গ্রæপের সদস্যরা কথায় কথায় ভাংচুর করেন দোকানপাট, বাড়িঘর। বাদ যায়নি মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িও। ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট শহরতলীর শিবগঞ্জ খরাদিপাড়ার আনন্দ-৬ বাসার মুক্তিযোদ্ধা শারফান আলীর বাড়িঘরে হামলা করেন নাজমুল ও তার অনুসারীরা। রড দিয়ে আঘাত করে ভেঙে দেন মুক্তিযোদ্ধার হাত। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় মামলা হলেও এখনও নাজমুলকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও শাহপরাণ থানার জিআর ১৫৪/১৬, জিআর ১৫২/১৬ মামলায়ও পলাতক রয়েছেন নাজমুল। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করা সিলেটের নতুন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়ও আছেন আলোচিত-সমালোচিত এ ছাত্রনেতা। সংস্থাটির করা সন্ত্রাসী তালিকায় মাদক ও অস্ত্র-ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্য মতে, গ্রেফতারকৃত সজলের বিরুদ্ধে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, সিলেটের কোতোয়ালী এবং এয়ারপোর্ট থানায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৮টি মামলা রয়েছে। আসামি রায়হানের বিরুদ্ধে ১টি হত্যা চেষ্টা মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। আসামি দুলালের বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যা চেষ্টাসহ মোট ৪টি মামলা রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান বলেন, কোম্পানীগঞ্জসহ বেশ কিছু এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশসহ একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ ছিনতাইকারী চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।