দরিদ্র জনগোষ্ঠির সহায়তায় সরকার কিছুই করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট উত্থাপনের আগের দিন বুধবার (২ জুন) দুপুরে এক দোয়া মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের জন্য সহায়তা। পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে যে, করোনা মহামারির ফলে দরিদ্র হয়ে গেছে, দারিদ্র সীমার নিচে এসেছে আড়াই কোটি মানুষ। আগের দরিদ্র তিন কোটি। তার মানে প্রায় ৬ কোটি মানুষ এখন দারিদ্র সীমার নিচে। এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে তার যে পারজিং পাওয়ার মিনিমামটা থাকতে হলে অবশ্যই এই মানুষগুলোর কাছে টাকা পাঠাতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ক্যাশ ট্রান্সফার করতে হবে। সেটা তারা (সরকার) করছে না। এখনো তারা একইভাবে তেলে মাথায় তেল দিচ্ছে অর্থাৎ যাদের ইন্ডাস্ট্রি আছে তাদেরকে আবারো প্রণোদনা দিচ্ছে, এই যে দিন আনে দিন খায় মানুষ তাদেরকে কিছুই দিচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীকাল বাজেট দিতে যাচ্ছে এই সরকার। আজকে মুস্তফা কামাল সাহেব একটি পত্রিকায় ইন্টারভিউতে বলেছেন, সব ধরনের মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছেন।
মুস্তফা কামাল সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ, তিনি ব্যবসাটা ভালো বুঝেন। অর্থনীতি কতটুকু বুঝেন তার নিদর্শন আমরা খুঁজে পাইনি। বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতবার যখন করোনা শুরু হলো তখনই আমরা সাথে সাথে আমাদের প্রস্তাবনা নিয়ে সামনে এসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে, করোনাকালে যে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হবে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, শ্রমিক শ্রেণি এবং আজকে আইনজীবীরা আমাকে অনেকে স্লিপ দিয়েছে যে, কোর্ট বন্ধ থাকার ফলে কোনো আয় নেই। যারা আইনজীবী আছেন তারা অত্যন্ত কষ্টে আছেন। এদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই।
তিনি বলেন, সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেই প্রণোদনা কীসের? মানুষকে তারা বোকা বানিয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নিতে হবে সকলকে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে সরকারের কী দরকার? ব্যাংক থেকে নেবে। এটা প্রণোদনা হলো কোত্থেকে? এটা প্রণোদনা নয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকে শোধ করতে হবে।
প্র্রণোদনা তাকেই বলে সরকার দুঃসময়েই আপনাকে যে আর্থিক সাহায্যটা করছে সেটা ফেরত নেবে না। আপনি সেই প্রণোদনার টাকা কাজে লাগাবেন। আমরা প্রস্তাবনায় বলেছিলাম যে, দিন আনে দিন খায় মানুষগুলো ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাস অনুদান দিতে হবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। গত কয়েকদিন আগে পত্রিকায় উঠেছে গাইবান্ধার একজন কৃষক সবজি চাষ করে বলেছে যে, ভাই বিক্রি হচ্ছে না। কারণ ট্রাক যায় না, ট্রাক আসে না- সরকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এর চেয়ে আমাদেরকে মেরে ফেললে ভালো হতো। তাহলে কাকে প্রণোদনা দিচ্ছে? আপনাদের লোকগুলোকে যারা লুট করছে, দেশের অর্থনীতিকে একেবারে শূন্য পর্যায় নিয়ে গেছে তাদেরকে।
‘মনগড়া প্রবৃদ্ধি হার’
মির্জা ফখরুল বলেন, বড় বড় দালাল তৈরি করছেন আর বলছেন উন্নয়ন, আর মনগড়া প্রবৃদ্ধির হার দিচ্ছেন আর বলছেন যে, উন্নয়ন, উন্নয়ন সেটা নয়। উন্নয়ন হচ্ছে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, সে যেন ভালো খেতে পায় বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে পারে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক থাকে সেটাকে বলে উন্নয়ন।
এমন উন্নয়ন করেছেন যে, হাসপাতালে বেড নাই। একটা হাসপাতালে বানিয়েছেন কোভিডের সময়ে ওইটা রাত্রের মধ্যে উধাও হয়ে গেলো, হাসপাতাল নাই। ব্যবসা আবার নতুন করে নতুন কমিশন পাবে। এটা তো কমিশন এজেন্ট সরকার। এটা তো জনগণের সরকার নয়।
এ সময় জিয়াউর রহমানের কর্মজীবনের নানা দিক আলোচনায় তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
পুরান ঢাকার জজ কোর্টে ঢাকা আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
বার ইউনিটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুম আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোন্দকার মো. হয়রত আলী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু, মহসিন মিয়া, খোরশেদ আলম, হোসেন আলী খান হাসান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাতে কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।