করোনাকালে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কব্জায় বগুড়ার হাট-বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির ঝাঁঝ। বাজারে পেঁয়াজের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি হওয়ায় কাঁচা বাজার করতে আসা ক্রেতাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা। আমদানি না হলে ৭ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২ জুন বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বগুড়া শহরের রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, কলোনি বাজার, খান্দার বাজার, বনানী বাজার, কালিতলা হাট, মাটিডালী বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি দেখা গেছে।

বগুড়ার সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ৎ রাজাবাজার। রাজাবাজারের আড়তদার ও পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, ১৫ দিন আগেও পাইকারি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ছিল ২৩ থেকে ২৭ টাকা। যা ১৫ দিনের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। যা খুচরা বাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।

তারা আরও জানান, আড়তে পেঁয়াজ আসার পর তিন স্তর পর ভোক্তাদের হাতে পৌঁছায়। মঙ্গলবার আড়ৎ থেকে পাইকাররা কিনেছেন প্রতি কেজি ৫০-৫২ টাকা দরে, পাইকাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ৫৫-৫৬ টাকা দরে এবং খুচরা ব্যাবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেছেন ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে।

বাজারে কথা হয় বেশ কয়েকজন সাধারণ ক্রেতার সঙ্গে। তারা প্রত্যকে ৫ থেকে ১০ কেজি করে পেঁয়াজ কিনেছেন। এত পেঁয়াজ কেনার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, গত সপ্তাহে পেঁয়াজ কিনেছি ৫০ টাকা কেজি করে। আজ পেঁয়াজ কিনতে হলো ৬৫ টাকা কেজি করে। দোকানদার বলছেন, আগামী সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দাম হতে পারে। তাই এক মাসের জন্য বেশি করে পেঁয়াজ কিনেছি।

বগুড়ার রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারে খুচরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দরে, কলোনি বাজার, খান্দার বাজার, বনানী বাজার, কালিতলা হাট, মাটিডালী বাজারের ওই একই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে।

পাইকারি দামের থেকে খুচরা দাম ১০-১৫ টাকা কেজি প্রতি বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রাজাবাজারের খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল, বিপ্লব, ফতেহ আলী বাজারের শামীম, আব্দুর রহমান, শিপন বলেন, পাইকারি পেঁয়াজ কেনার পর তা বাছাই করতে হয়। পাইকারি পেঁয়াজ কাটা (৫০ কেজি) দরে কিনতে হয়। যার ফলে প্রতি কেজিতে প্রায় ১৫০ গ্রামের মতো ঘাটতি হয়। তাই দামের পার্থক্য হয়। তবে দাম বাড়ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষকে আগামী ১৫ দিন পর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা বা তার বেশি দিয়ে কেনা লাগবে।

জেলা বাজার মনিটরিং সূত্রে জানা যায়, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা জেলার সদর, সুজানগর, বেড়া, কাশিনাথপুর উপজেলায়।

এ ছাড়া নাটোর, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে এতে দেশের মোট চাহিদা পূরণ হয় না। দেশের পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এ ছাড়া মায়ানমার, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

তবে দেশে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় ৯৫ শতাংশ ভারত থেকে আনা হয়। তবে বগুড়া তথা সারাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ার মূল কারণ আমদানি না হওয়া।  গত ৩০ এপ্রিলের পর দেশে বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বগুড়া রাজাবাজারের আড়তদার ও ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যাচ্ছে। পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোরের পেঁয়াজ দিয়ে বগুড়ায় চাহিদা মেটানো সম্ভব না। আমদানি বন্ধ হওয়ায় গত ১৫ দিনে ধাপে ধাপে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১৫/২০ দিন পর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ বা তার বেশি হতে পারে।

তবে বাজার স্থিতিশীল করতে হলে পেঁয়াজ আমদানি দ্রুত শুরু করা দরকার। গত ৩০ এপ্রিলের পর আর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব হয়নি। আমদানি না হলে সাধারণ মানুষ পেঁয়াজ কিনতে বিপাকে পড়বেন বলেও মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, দেশে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। এ কারণে পেঁয়াজ আমদানিম করতে হয়। আমদানি করা ১০০ শতাংশের প্রায় ৯৫ শতাংশ পেঁয়াজ ভারত থেকে করা হয়। ভারত থেকে সর্বশেষ দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ৩০ এপ্রিল পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে পরবর্তীতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। আর এই কারণে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি পুনরায় শুরু হলে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন ওই কর্মকর্তা।