আসন্ন অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতার কারণে বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে অভিমত দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটির মতে, চলমান করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রস্তাবিত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব দিক নির্দেশনা থাকা উচিত ছিল, তা নেই।

জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ সরকারের ৫০তম বাজেট উত্থাপনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে সিপিডি। সেখানে বাজেটের নানা দুর্বল দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

বাজেট প্রস্তাবের পর এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিপিডি জানায়, বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া উচিত ছিল, তা-ও দেয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ফাহমিদা খাতুন ছাড়াও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘করোনা মহামারি রুখতে জরুরি প্রয়োজনে বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এই টাকা যথেষ্ট নয়। যারা টিকা নেওয়ার যোগ্য, তাদের সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। টিকাদান কর্মসূচি থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও তাই রাখা হয়েছে। মানে হলো, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। তবে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেই টাকা খরচ করতে হবে। সেজন্য স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে।’

সংস্থাটির এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন করোনা মোকাবিলা। রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত আইসিইউ ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা। চিকিৎসক ও নার্সের ব্যবস্থা করা।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলা হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন যোগ করা হয়েছে। এ কারণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বড় করে দেখানো হচ্ছে। এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা মহামারির এই সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাজেটে যা থাকার কথা, তা নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের উন্নয়নে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। বিপরীতে অনুন্নয়ন ব্যয় আরও বেড়েছে। যেখানে উন্নয়ন ব্যয় আশানুরূপ বাড়েনি। এমনকি প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগের বিষয়েও সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি বলে মনে করছে সিপিডি।

গত ৩১ মে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর আরোপ না করে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়ে সম্প্রসারণমূলক বাজেট করার সুপারিশ করেছিল সংস্থাটি। একইসঙ্গে নীতি পরিকল্পনায় মোট দেশজ উৎপাদানের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির চিন্তা থেকে বেরিয়ে বৈষম্য রোধ ও সুষম বণ্টনের দিকে মনোযোগ বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছিল।