ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢালিউড নায়িকা পরীমনি। রোববার (১৩ জুন) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিবরণ।
সংবাদ সম্মেলনে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন এ অভিনেত্রী। এ সময় একাধিকবার কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে তাকে। কথা বলতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন পরীমনি।
সবশেষ পরীমনি বলেন, ‘আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমি যদি মরে যাই, বুঝবেন মেরে ফেলা হয়েছে। আমি সুইসাইড করতে পারি না, সুইসাইড করব না। আমি আমার বিচার নিয়ে মরব। আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমি অন্যায়ের বিচার চাই।’ কথাগুলো বলার সময় বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন এ অভিনেত্রী।
সেদিন কী হয়েছিল? জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, রীমণি বলেন, ‘গত বুধবার (৯ জুন) রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাছির ইউ. মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। সেসময় নাছির ইউ. মাহমুদ নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন।’
‘সেখানে নাছির ইউ. মাহমুদ আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তারপর আমাকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে বনানী থানায় গিয়েছিলেন দাবি করে পরীমণি বলেন, ‘থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার অভিযোগ শুনলেও লিখিত কোনো কাগজপত্র নেয়নি। থানা থেকে তেমন কোনো সাড়া না পেয়ে চলে আসি।’
বিচার চেয়ে শিল্পী সমিতির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন জানিয়ে পরীমণি দাবি করেন, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক (অভিনেতা) জায়েদ খান তাকে আশ্বস্ত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে ধরেন পরীমণি।
তিনি লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’
পরীমণি আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’
‘আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’
পরীমণির স্ট্যাটাস সম্পর্কে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব।
তবে, কেন তিনি আইজিপি স্যারের নাম উল্লেখ করেছেন তা আমি বুঝতে পারছি না। আমরা নিশ্চিত, তিনি মোটেই আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আইজিপি স্যার সর্বদা নারী ও শিশুদের অধিকারের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।’