টানা এক যুগেরও বেশি ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের তৃণমূল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সাংগঠনিকভাবেও বেশ অগোছালো তৃণমূল।
ফলে শৃঙ্খলা ফেরাতে মনোযোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি ‘বিতর্কিত’দের চিহ্নিত ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। স্থানীয় এমপি এবং জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে বেশিরভাগ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
আবার যেগুলোর সম্মেলন হয়েছে, সেগুলো কমিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র আর বসে থাকতে চায় না।
দলীয় সভাপতির নির্দেশনায় সংগঠনকে গোছাতে মাঠে নেমেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। তারা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
যার ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিভাগ, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটি জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিভাগীয় দয়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা করেন।
নীতিনির্ধারণীয় পর্যায়ের নেতারা জানান, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। তৃণমূলের কিছু কিছু জায়গায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। সভাপতির নির্দেশনায় নেতাদের সমন্বয়ে আটটি টিম তা সমাধানে মাঠে নেমেছে। সংকট নিরসন করে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।
যার ইঙ্গিত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও পাওয়া যায়। সম্পতি তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে দলে সুদৃঢ় ঐক্য ফিরিয়ে আনতে হবে। চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের কোনো অবস্থাতেই দলে আনা যাবে না। ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া ইউনিট কমিটি গঠনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতির ওপর নির্ভর করে ডিসেম্বরের মধ্যেই তৃণমূল সম্মেলন শেষ করা হবে। এর মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য জানান, আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশলী। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বেশকিছু কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। মহামারীর কারণে সম্মেলন করাও সম্ভব হয়নি। এতে নেতৃত্বের কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। দলের সভাপতি ইতিমধ্যে নেতাদের সমন্বয়ে আটটি টিম করে দিয়েছেন। তারা কাজও শুরু করেছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আরও জোরদার করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষেকে নিয়ে রাজনীতি করে। এখন করোনা মোবিলা বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনীতি মানুষের জন্য। এখন রাজনীতি করার সময় নয়। আমাদের সাংগঠনিক যে উদ্যোগ রয়েছে, কারোনা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটলে সেটিও জোরালো হবে।
তিনি বলেন, অনেকগুলো কমিটির সম্মেলন হয়েছে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে চাই। যাদের দলে অবদান আছে তাদের যোগ্য স্থানে রাখতে হবে। তা না হলে দল চলবে না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, মহানগরে গতিশীল নেতৃত্ব তৈরির জন্য ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে দায়িত্বশীল নেতারাও কাজ করছেন।