গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তের ঘণ্টায় ওই রোগীদের মৃত্যু হয়।
বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১০ জন রোগী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। যাদের অধিকাংশেরই উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালটিতে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে মাত্র দুটি। আরও দুটি নাজাল ক্যানুলা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও তা চালু করা যায়নি। অপর্যাপ্ত সরঞ্জাম নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয়জন রোগী মারা গেছেন। দুই হাসপাতাল মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ১৩ জন।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় মারা যান নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার ভাদশাইল গ্রামের বাসিন্দা ও বাদশাইল উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন চৌধুরী।
মৃতের ছেলে মোস্তাক হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, করোনায় আক্রান্ত তার বাবা অতিমাত্রায় শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা (লেভেল) ৭০–এ নেমে এসেছিল। রাত থেকেই শ্বাসকষ্টে তিনি ছটফট করেছেন। তাকে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করতে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দরকার ছিল। এ জন্য চিকিৎসক-নার্সের কাছে ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেখা পাননি, নার্সরাও পাত্তা দেননি। সকালে ছটফট করতে করতে বাবা চোখের সামনে মারা গেছেন।
হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। গেল ২৭ জুন শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০০ তে উন্নীত করা হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২২৩ জন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ছিল ২০০ জন। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার সকালে হাসপাতাল প্রশাসন আরও ২৫ শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরও সকাল সাড়ে নয়টায় ‘ইয়ালো ওয়ার্ডে’র বারান্দায় শ্বাসকষ্টে ছটফট করা তিনজন রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জন এবং পরে আরও ২ জন রোগী মারা গেছেন। তবে কেউ হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা–সংকটে মারা গেছেন এমনটা এখনো দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা জানাননি। অভিযোগ কেউ করতেই পারেন। তবে এই মুহূর্তে একসঙ্গে দুজনের বেশি রোগীকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলায় অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা এখানে নেই।
তিনি আরও বলেন, এখন ভরসা রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা। তবে অক্সিজেন–সংকট রয়েছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার লিটার অক্সিজেন লাগছে। সাত দিনে সরবরাহ মিলছে মাত্র ৮ হাজার লিটার। রোগীর সংখ্যা অনুপাতে অক্সিজেনের বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার।
দুটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা বাক্সবন্দী থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, বরাদ্দ পাওয়ার পর নিজ উদ্যোগে টেকনিশিয়ান ডেকে এটি চালু করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে চালু করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও ন্যূনতম ২৫টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা চেয়ে অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো সাড়া মেলেনি।