মহামারি করোনা ভাইরাসের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই মুসলিম জাহানের দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা জমে উঠেছে। করোনাকালীন সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সশরীরে হাটে না গিয়ে অনেকে ঘরে বসেই পছন্দের পশু কিনে নিচ্ছেন। ফলে কোরবানির পশু কেনাবেচার ভার্চুয়াল বাজার ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রয় কার্যক্রম অগ্রগতির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিদিন অনলাইন হাটে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পশু বিক্রি হচ্ছে। সবশেষ তথ্য মতে, অনলাইনে পশু বিক্রি ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১৭ হাজার পশু বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।
গতকাল শনিবার (১৭ জুলাই) প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনলাইনে কোরবানিযোগ্য পশু বিক্রয় কার্যক্রম অগ্রগতির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৬ দিনে অনলাইনে এসব পশু বিক্রি হয়েছে। এ পর্যন্ত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ কোরবানিযোগ্য পশুর অনলাইন বাজার বসেছে প্রায় ১৮০০টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানান, গত ১৬ দিনে মোট ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮১৯টি পশু বিক্রি হয়েছে। যার বাজারমূল্য ২ হাজার ১৪২ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ১৬৮ টাকা। গত একদিনে শনিবার বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ৯৯২টি পশু। যার বাজারমূল্য ১৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ৬ হাজার ২৪১ টাকা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনলাইনে পশু বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ বিভাগে মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৬টি পশু বিক্রি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ১ হাজার ২৫ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৮ টাকা।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ৫০৬টি পশু বিক্রি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ২৩২ টাকা।
রাজশাহী বিভাগে ৪১ হাজার ২৮১টি পশু বিক্রি হয়েছে ২৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৪০ টাকায়। খুলনা বিভাগে ১৬ হাজার ৩০৩টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে ১০৩ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ১০০ টাকায়। বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ২৭০টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি ৫১ লাখ ৭৯ হাজার ৪০০ টাকায়।
এছাড়া সিলেট বিভাগে ৩ হাজার ২৬৩টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে ১৯ কোটি ১৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৮ টাকায়। রংপুর বিভাগে ৪১ হাজার ১৭৬টি পশু বিক্রি হয়েছে ২০৯ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ৩১০ টাকায়। ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৬০৪টি পশু বিক্রি হয়েছে ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকায়।
অনলাইন হাটে ২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৬ দিনে মোট ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮১৯টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৯টি এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৬৬ হাজার ৪৭০টি। সব মিলিয়ে কোরবানির মোট পশু বিক্রি এখন পর্যন্ত বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪২ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ১৬৮ টাকা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সম্প্রসারণ শাখার পরিচালক ডা. দেবাশীষ দাশ জানান, ‘সারা দেশেই আমাদের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা অনলাইনে পশু বিক্রির কার্যক্রমে খামারিদের সহায়তা করছেন। কোনও খামারি চাইলে স্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পশু অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া খামারিদের যেকোনও তথ্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সরবরাহ করছেন।’
অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে এবার শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রিতে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কাজ করে যাচ্ছে। আমরা খামারিদের বলছি, অনলাইনে পশু বিক্রিতে যেকোনও সমস্যা হলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানাতে। খামারিদের পাশে থেকে তাদের পশু বিক্রিতে সব ধরনের সহযোগিতা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।’