ক্রেতা সমাগম বাড়ছে রাজধানীর কোরবানি পশুর হাটে। গত কয়েক দিনের তুলনায় বিক্রিও বেড়েছে। তবে অনেক ঘোরাঘুরির পরই পশু কিনছেন অনেক ক্রেতা। তারা বলছেন, হাটে এখন তুলনামূলক পশুর দাম বেশি। কেউ কেউ শুধু হাট ঘুরেই বাসায় ফিরেছেন।
তাদের ধারণা, আজ ও আগামীকালের হাটে পশুর দাম কমবে। আর বিক্রেতারা বলছেন, পশু পালন, হাটে আনা এবং অন্যান্য খরচ বেশি হওয়ায় বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি করলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আর বিরূপ আবহাওয়াও তাদের ভাবাচ্ছে। কারণ গতকাল সারাদিনই বৃষ্টিভাব ছিল। বৃষ্টি বাড়লে দুর্ভোগও বাড়তে পারে।
এদিকে রাজধানীর তৎপরতা থাকলেও পশুর হাটে গতকাল স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত দেখা গেছে। গতকাল রোববার ঢাকার আফতাবনগর হাটে ‘সাহেববাবু’ নামে ২৫ লাখ টাকার একটি গরু উঠেছে। চলা-ফেরায় তার নামের প্রতিফলন স্পষ্ট। পাবনা থেকে বিশাল আকৃতির এ গরু পিকআপে ঢাকায় আনতে ১০ জনের একটি দল এসেছে। চার্জার ফ্যানের সঙ্গে আনা হয়েছে হাত পাখাও। দলের পাঁচ ও ছয়জন পালাক্রমে বাতাস করছেন। শরীর ঠান্ডা রাখতে ঢালতে হচ্ছে পানি।
সরেজমিন দেখা গেছে, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের পশুর হাট পূর্ণ গরু, ছাগল ও মহিষে। বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। চলছে। তবে অনেকের অভিযোগ, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না এ হাটে। বেশির ভাগ ক্রেতার অভিযোগ, গরু-ছাগলের চড়া দাম হাঁকা হচ্ছে উত্তরার পশুর হাটে। ফলে হাট ঘুরে পশু না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক ক্রেতাকে। আরও দেখা গেছে, উত্তরা সেক্টর ১৭-তে পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তুলনামূলক দামের চেয়ে অনেক বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা।
এ বিষয়ে আরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে ঘুরছি। প্রতিটি গরু দাম অস্বাভাবিক বাড়তি চাওয়া হচ্ছে। এজন্য ৬০ থেকে ৬৫ হাজার দামের একটি গরু ৮৫ হাজার বললাম। খামারি একদাম এক লাখ ১০ হাজার জানিয়ে দিলেন। অপর একটি গরু ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা মূল্যমানের ১ লাখ ২০ হাজার বললাম। তাদের সাফ কথা দেড় লাখ লাগবে। নইলে গরু বিক্রি করব না।
গতকাল রোববার গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরু-ছাগলে কানায় কানায় পূর্ণ। ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও বেচা কেনায় ধীরগতি। গরু-ছাগল রাখার জন্য বাঁশ দিয়ে যে শেড বানানো হয়েছে তা খালি নেই। হাটের নির্ধারিত সীমানা পেরিয়ে হাটের বাইরে গরু-ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে। অনেক বিক্রেতা জায়গা না পেয়ে হাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধের উক্ত স্থানে গরু-ছাগল নিয়ে বসে রয়েছেন। মেহেরপুর থেকে রোবাবার সকাল ১০টায় ৭০টি ছাগল নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী হাতেম আলী।
তিনি বলেন, হাটে জায়গা না থাকায় ছাগল নিয়ে এখানে (বেড়িবাঁধে) বসে রয়েছি। নিজের খরচে বাশের খুঁটি ও উপরে প্লাস্টিকের কাগজ লাগিয়েছি। হাটের লোকজনকে ভেতরে বসার ব্যবস্থা করে দিতে বললেও তারা কথা শুনেনি। এমনকি পায়েও ধরেছি কোনো কাজ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, হাট গরু-ছাগলে ভরে গেছে। ক্রেতারা সংখ্যা কম। বেচাকেনা ভালো না হয় এত লোকের যে কী অবস্থা হবে আল্লাহ ভালো জানেন।
ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ৩টি ছাগল নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম। এর মধ্যে একটি রাম ছাগলও রয়েছে। রাম ছাগলটির দাম হাঁকিয়েছেন ৯০ হাজার টাকা, ওজন ৮৫ কেজি। তিনি আরও বলেন, এত বড় ছাগলের ক্রেতা নেই। এক ক্রেতা ৪৫ হাজার টাকা বলেছেন। অথচ ৮ মাস আগে আমি খাসিটি ৫৫ হাজার টাকায় কিনেছি। অবশ্য সকালে ছোট ছাগল ২টি ২৩ হাজার টাকায় বিক্রিও করেছি।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উত্তম দেব জানান, ১৫টি ছোট ও মাঝারি গরু নিয়ে এসেছেন। সকালে ৯৫ হজার টাকায় মাঝারি সাইজের একটি গরু বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, আমার বাড়িতে পালা গরু। তাই দাম একটু কম হলেও সমস্যা নেই। যারা গরু ব্যবসায়ী তাদের দাম একটু বেশি। তারা গরু কিনে এখানে বেশি লাভের আশায় বিক্রি করতে নিয়ে আসেন।
মাঝারি গরু দেড় লাখ ও ছোট গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় গরুর চাহিদা কম। তবে যারা বড় গরু কিনেন তারা গরু কিনেই হাট থেকে বের হন। ছোট ও মাঝারি গরু ক্রেতার হাট ঘুরে যাচাই-বাছাই করে চলে যান। এ বিষয়ে হাট ম্যানেজার হাসিম বলেন, হাটে ৭০ হাজারের মতো গরু ছাগল এসেছে। আরও পশু আসছে। বেচাকেনা মোটামুটি।
মিরপুর ১২ নম্বর ইস্টার্ন হাউজিং কোরবানি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ১০ হাজারের মতো পশু রয়েছে। প্রতিনিয়ত হাটে পশু ঢুকছে। রোববার সকাল থেকে টুকটাক বেচাকেনা চললেও বিকালের পর বেড়েছে। এ হাটের সবচেয়ে বড় গরু দামা হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
পুরান ঢাকা এলাকার হাট ঘুরে দেখা গেছে, দনিয়া কলেজ মাঠ (শনিরআখড়া) এবং গোলাপবাগ পশুর হাটে মাঝারি ও ছোট আকৃতির গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর চাহিদা কম। তুলনামুলক গরুর দাম বেশি হওয়ায় বড় গরু দিকে কম যাচ্ছে ক্রেতা। এতে দুশ্চিন্তায় গরু খামারিরা।
আরও দেখা গেছে, কোরবানির পশুর হাট দুটিতে মানুষের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। মানুষ চাচ্ছে তাদের কোরবানির পশুটি সাধ্যের মধ্যে ক্রয় করতে। কিন্তু খামারিদের চড়াও মুল্য চাওয়ার কারণে অনেকে গরু না কিনেই বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।
ক্রেতারা বলছে, খামারিরা তাদের গরু মূল্য বেশি চাচ্ছে। খামারিদের মূল্য মতে মাঝারি সাইজের গরু কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেকের। বড় গরু কথা কিন্ত করতে পারছেন না।
রাজধানীর পশুরহাটে দুই দিনে ৬ জনের করোনা শনাক্ত
অন্যদিকে রাজধানীর ৯টি পশুর হাটে দুই দিনে ছয় ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল রোববার চারজনের করোনা শনাক্ত হয়। রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে ব্র্যাকের করোনা সুরক্ষা কর্নারে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে ওই ব্যক্তিদের করোনা শনাক্ত হয়।
ব্র্যাক জানিয়েছে, রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৩৬ জনের করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। গত শনিবার ৯টি বুথে ৫৬ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে দুজন করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়। গতকাল করোনা শনাক্ত হওয়া চারজনের মধ্যে দুজনের করোনা শনাক্ত হয় রাজধানীর উত্তরখানে কোরবানির পশুর হাটে। তাদের একজনের বয়স ২২ বছর, আরেকজন ২৩ বছর। এ ছাড়া আফতাব নগরের হাটে ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ও উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে অস্থায়ী এক হাটে ১৮ বছর বয়সী এক তরুণের করোনা শনাক্ত হয়।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির ব্যবস্থাপক মিরানা জামান বলেন, অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় উত্তরখানের হাটে দুজন এবং আফতাব নগরের হাটে একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্যজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের তুরাগ হাটে।