নড়াইলের চিত্রা নদীতে অনুষ্ঠিত হলো আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন পর নৌকা বাইচকে ঘিরে চিত্রা নদীর চার কিলোমিটার জুড়ে নদীর দুপাড় ছিলো লাখো মানুষের ভীড়। আনন্দ উচ্ছাসে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছেন নানা বয়সী মানুষ।
শনিবার (২ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় বিশ্ব পর্যটন দিবস-২০২১ উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্যুড়িজম বোর্ড ও নড়াইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শেখ রাসেল সেতু চত্বরে ‘বিশ্ব পযটন দিবস এসএম সুলতান নৌকা বাইচ” প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বে-সামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী এমপি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল-২ আসনের সদস্য সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক সফল অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, বে-সামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যুড়িজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন ,এনডিসি, নড়াইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় (পিপিএম), জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারন সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু, পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, বিশ্ব পর্যটন দিবস এসএম সুলতান নৌকা বাইচ কমিটির সাধারন সম্পাদক ও বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু সহ অনেকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রতীক্ষিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। শেখ রাসেল সেতু থেকে শুরু হয়ে প্রায় চার কিলোমিটার নদীপথ অতিক্রম করে চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান সেতুতে গিয়ে শেষ হয়।
প্রতিযোগিতায় নড়াইল, খুলনা, গোপালগঞ্জ সহ পাশ^বর্তী জেলা থেকে আসা কালাই ও টালাই ২টি গ্রুপে মোট ১৪টি নৌকা অংশ গ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় কালাই গ্রুপের মাগুরা সদরের খানবাড়িয়া গ্রামের মোঃ জহুর মোল্যার নৌকা “আল্লার দান মাগুরা টাইগার্স” –প্রথম, পাবনার মুক্তনগরের হাফিজুরের নৌকা “শাপলা” দ্বিতীয় ও মাগুরার মোহম্মদপুর উপজেলার ধুমরাই গ্রামের আতর আলীর নৌকা “মায়ের দোয়া ” তৃতীয় হয়েছে।
এছাড়া টালাই গ্রুপে- খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার ঘোষগাতি গ্রামের আলকাজ শেখের নৌকা “ সোনার বাংলা” প্রথম, তেরখাদা উপজেলার পারহাজি গ্রামের সাইফুল সিকদারের নৌকা“রকেট ” দ্বিতীয় ও গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জোয়ারিয়া গ্রামের নিকুঞ্জু কুমার মন্ডলের নৌকা “মা শীতলা” তৃতীয় হয়েছে।
প্রতিযোগিতা শেষে রূপগঞ্জ বাঁধাঘাটে বিজয়ীদের মাঝে অতিথিবৃন্দ পুরষ্কার বিতরণ করেন। এদিকে প্রতিযোগিতাকে ঘিরে সকাল থেকে নড়াইলের পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে উৎসুক জনতা আসতে শুরু করেন। বাস , ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, মোটর সাইকেল সহ বিভিন্ন যানবাহনে দর্শকরা দুপুরের আগেই নড়াইল শহরে পৌছে যান। শেখ রাসেল সেতু থেকে শিল্পী এসএম সুলতান সেতু পর্যন্ত চিত্রার দুপাড়ে অবস্থান নেন দর্শকরা।
নৌকা বাইচ ভালভাবে উপভোগ করতে অনেকেই গাছে উঠে আবার অনেকে ছাদে উঠে উপভোগ করেছেন। তবে নৌকা বাইচ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে বহিরাগত দর্শনার্থীদের ট্রলার নৌকা বাইচ এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন প্রশাসন।
লোহাগড়া উপজেলার বাড়ীভাঙ্গা গ্রামের রুবেল হোসনে বলেন, ‘ দীর্ঘদিন ধরে আমরা করোনায় ঘরে বন্দি ছিলাম। আজকে নৌকা বাইচ দেখতে পেরে ভীষণ মজা পেয়েছি। করোনাকালের ক্লান্তি আজ দুর হয়ে গেছে। দ্রুত করোনামুক্ত বাংলাদেশ স্বাভাবিক গতিতে ফিরে যাক এই কামনা করি।
মাগুরার মহাম্মদপুর এলাকার দর্শনার্থী আফসানা জ্যোতি বলেন, ‘ আজ মনে হলো আমরা করোনার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছি। দীর্ঘ দেড় বছর পর এতো বড় একটা আয়োজন দেখতে পেলাম। নৌকা বাইচ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী আয়োজন। এভাবে বেশি বেশি আয়োজন করা হলে আমরা ফেসবুক, ইউটিউব, মোবাইল গেম থেকে কিছুটা হলেও নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে পারবো।’