পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর গত সপ্তাহে (২১-২৫ জানুয়ারি) পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবস সূচকের বড় পতন হলেও তলানিতে থাকা লেনদেনে চাঙাভাব দেখা গেছে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে গড় লেনদেন ২৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং সিএসইতে ৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেড়েছে।
যা পুঁজিবাজারে জন্য ইতিবাচক হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার দীর্ঘদিন পরে হলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রাণ ফিরে এসেছে। গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। চলতি সপ্তাহে এটি আরো বাড়বে বলেও মনে করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে সূচকের পতনে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
দীর্ঘদিন ফ্লোরে আটকে থাকার কারণে লেন বাজারে লেনদেনে স্থবিরতা দেখা দেয়। এই মুহূর্তে ফ্লোর তুলে নেওয়ার বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে বাজারে ফোর্স সেলের কারণে সূচকের পতন দেখা দেয়। গত সপ্তাহের শেষ দুইদিন অনেক হাউজ বিনিয়োগকারীদের ফোর্স সেল করতে বাধ্য করেছে আবার কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়েও শেয়ার বিক্রি করেছেন এজন্য বাজারে সূচকের পতন হয়।
বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ইতোমধ্যে সিইও ফোরাম বাজারে ভালো ভূমিকা রাখছে তাই আতঙ্কিত না হয়ে দেখে শুনে বুঝে বিনিয়োগ করুন।
আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি তারা যেন বাই মুডে থাকে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও বাজারে সর্তক দৃষ্টি রাখছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসহ সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখেছে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম।
এ ব্যাপারে সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা যেন পেনিক হয়ে শেয়ার বিক্রি না করেন।
অন্যদিকে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোরপ্রাইস থাকার কারণে বাজারে লেনদেন একদম কমে গিয়েছিল। এতে ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউজ তাদের পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছিল না। ক্ষতির মুখে পড়েছিল শেয়ারবাজার।
তিনি বলেন, মার্কেটকে মার্কেটের মতো চলতে দিতে হবে।
তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন ফ্লোরপ্রাইস তুলে দেওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ভালো হয়েছে। খুব শিগগির বাজার স্থিতিশীল হবে বলে তারা মনে করি।
সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর গত সপ্তাহে (২১-২৫ জানুয়ারি) ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে কমেছে ৩২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে তা কমে সাত লাখ ৫৪ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকায় নেমে আসে। একই সময়ে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে সপ্তাহশেষে বেড়েছে আর্থিক ও শেয়ার লেনদেন।
সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৮টির। আর ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ সময় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৮০ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি পতন হয়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ১৫ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৩৬ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইর সবকটি মূল্যসূচক কমলেও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। গত সপ্তাহের (২১ থেকে ২৫ জানুয়ারি) গড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে (১৪ থেকে ১৮ জানুযারি) প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭২৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ২৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বা ৩৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৮৫২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা বা ৩৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।
অপরদিকে গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএসপিআই ১২৫৪ পয়েন্ট কমে ১৭ হাজার ৫৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যা এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের চেয়ে সিএসইতে গড় লেনদেন বেড়েছে ৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারে লাগাতার দরপতন দেখা দিলে ২০২০ সালে মার্চে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করলেও ২০২১ সালের জুলাইয়ে তা তুলে নেওয়া হয়। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আবারও ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এ নিয়ে সমালোচনা হলে গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান বাদে সবগুলোর ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি আরও ২৩ প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি।