মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে আতঙ্ক বাড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করা বাসিন্দাদের মধ্যে। তাদের ছোঁড়া গুলি ও মার্টার শেল প্রায় এসেছেই পড়ছে বাংলাদেশ অংশে।
চলমান এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
সোমবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল আটটা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ চলে, যা শুরু হয় রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়ার কাছাকাছি মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি ঘিরে।
গত সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের সংঘর্ষ বেড়ে গেছে। দু’পক্ষের ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) তুমব্রু এলাকার দুই বাংলাদেশি আহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্তচৌকিটি বাংলাদেশের লোকালয়ের একদম কাছাকাছি। ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি থেকে বাংলাদেশের লোকালয় প্রায় ৮০০ মিটার দূরে। ঢেঁকিবনিয়া ও বাংলাদেশের লোকালয়ের মাঝখানে নাফ নদী ও প্যারাবন রয়েছে। এ কারণে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে গোলাগুলির সময় যেভাবে মানুষের বসতঘরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে, ঢেঁকিবনিয়ায় সেভাবে পড়েনি।
জানা যায়, ভোর থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের মানুষ। হিন্দুপাড়া, কোনারপাড়া, পশ্চিমকুল, উত্তরপাড়া ও মধ্যমপাড়ার বেশিরভাগ মানুষ উখিয়া সদরসহ বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যান। তারা এখনও বাড়ি ফেরেননি।
স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, তুমরু রাইট ক্যাম্প সীমান্তচৌকিতে গোলাগুলি নেই। পরিবেশ শান্ত। তবে লোকজনের মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাটেনি।
সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। বিদ্যালয়গুলো হলো বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে সাধারণ জনগণের চলাচল বন্ধ করার পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনা দেয় স্থানীয় প্রশাসন। সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে বিজিবির টহল জোরদার করার পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপদে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক জানান, সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে আমাদের আরও সর্তক থাকতে হবে এবং নিরাপত্তার কারণে ঘুমধুম ও তুমব্রু এলাকার বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি সড়কে যানবাহন ও সাধারণ জনগণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।