ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পদ্মাসেতু হয়ে খুলনাগামী সুন্দরবন ট্রেন কুষ্টিয়া স্টেশন হয়ে চলাচল করায় এ রুটে স্বস্তির আশা ছিলো যাত্রীদের। বাস এর পরিবর্তে কম সময়ে সহজেই নিরাপদ ও সাশ্রয়ী এ রেল যোগাযোগ।
তবে ট্রেনের দৈর্ঘ্যরে সঙ্গে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের কম-বেশি যেন ভোগান্তির অন্যতম কারণ। রীতিমতো যুদ্ধ করে যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে হয় প্রতিদিন। সেই সঙ্গে নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয়। প্ল্যাটফর্মে আইনশৃঙ্খলায় রক্ষায় নিয়োজিতদের ঢিলেমির কারণে অন্যান্য ভোগান্তির সঙ্গে বেড়েছে পকেটমারের বিড়ম্বনা।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী একটি ট্রেন বেলা ১২.৩২ মিনিটে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এসময় দেখা যায়, শতশত যাত্রী ট্রেনে উঠার জন্য ছুটাছুটি করছে। ঠিকমতো ট্রেনে উঠতেই পারছে না অনেকে। এর মূল কারণ হলো-কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন থেকে সচারচর জ, ঝ, ঞ এই তিনটি বগির টিকিট বেশি দেওয়া হয়। আজকের টিকিটের মধ্যে বেশিরভাগই ঝ বগির। আর ঝ বগির অস্থান স্টেশন প্ল্যাটফর্ম থেকে ২ বগি পরে। রেল লাইনের পাশ দিয়ে অসংখ্য দোকান, পথচারীদের জন্য রেলিং দেওয়া এবং প্ল্যাটফর্মের বাইরে হওয়ায় ট্রেন থেকে নামা এবং উঠার সময় ভোগান্তীতে পড়তে হয় যাত্রীদের।
এরইমাঝে পকেটমারদের আনাগোনাও বেড়ে যায় সেখানে। তবে কিছুই করার থাকে না যাত্রীদের।
কুষ্টিয়াস্থ রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দপ্তর ও পোড়াদাহ এবং রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে পোড়াদাহ রেলওয়ে থানাধীন অঞ্চলে সংঘটিত ২১টি চুরি, ০৬টি মাদক ও ০৩টি চোরাচালানের ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। এসব মামলাগুলো তদন্তাধীন আছে। একই ভাবে রাজবাড়ি থানা এলাকায় ০৩টি চুরি এবং ০২টি মাদক মামলা রুজু হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই রেল পুলিশ বাদি হয়ে করা মামলা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের খুলনা জোনের মধ্যে রেল যাত্রীদের টাকা পয়সা ও মালামাল চুরির ঘটনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা হয়েছে পোড়াদাহ রেলওয়ে থানায়। যদিও বাস্তবে এই অঞ্চলে রেল যাত্রীদের মালামাল চুরির সর্বমোট ঘটনার শতকরা ১০ ভাগও মামলার আওতায় আসেনি বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে প্রায় প্রতিদিনই টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে ১০/১২ জন সদস্যের একটি পকেটমার চক্র। এরা কোর্ট স্টেশন থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত সংঘবদ্ধ ভাবে চলা ফেরা করে। তারা কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে যাত্রী বেশে ট্রেনে ওঠা ও নামার সময় ট্রেনের কামরায় গেটে প্রচণ্ড ভীর সৃষ্টি করে পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে।
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় আসা সুন্দরবন ট্রেনের যাত্রী শরিফুল আলম জানান, প্ল্যাটফর্ম থেকে এত দূরে ট্রেন থামার কারণে সবারই কষ্ট হয়েছে। পরিবার নিয়ে নিরাপদে চলাফেরার জন্য ট্রেনই আমাদের আস্থা, কিন্তু কুষ্টিয়া স্টেশনে যেভাবে নামতে হলো তাতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।
শারমিন আক্তার নামের এক যাত্রী জানান, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন দূরে থামার কারণে নামতে এত কষ্ট হয়ছে; তা বলে বোঝাতে পারবো না। একদিকে যেমন ভিড় ঠেলে উঠছে মানুষ অন্যদিকে নামছে। বাচ্চা নিয়ে, ব্যাগ নিয়ে নামাটা এক প্রকার যুদ্ধের মতো।
খুলনাগামী এক যাত্রী সিহাবুল ইসলাম জানান, আমরা যুবকরা না হয় যে কোন ভাবে উঠতে পারবো, কিন্তু নারী ও বয়স্কদের তো এভাবে উঠা সম্ভব না। এভাবে চললে যে কোন সময় এখানে বড় দুর্ঘটনা ঘটবে।
কুষ্টিয়া শহরের মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু অভিযোগ করেন, গত ২৬ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন থেকে ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেসে ওঠার সময় পকেটমার চক্র রেলের দড়জায় ভিড় সৃষ্টি করে আমাকে একরকম ঠেসেধরে মানি ব্যাগটি বের করে নেয়, বিষয়টি আমি যখনই টের পেয়েছি ওই পকেটমার তখন চলন্ত ট্রেন থেকেই বাবর আলী গেইট এলাকার সিগনালের নিকট লাফ দিয়ে নেমে পালিয়ে যায়।
একইভাবে ট্রেনে উঠার সময়ে রেলযাত্রী আব্দুল হালিম, খালিদ হোসেন নামক ব্যাক্তিগণের পকেট কেটে টাকা বের করে নেয় পকেট মার চক্র। এভাবে গত দুই মাসে কেবলমাত্র কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে ২০টি পকেটমারের ঘটনার অভিযোগ আছে বলে জানান কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের ইনচার্জ ইতিয়ারা খাতুন।
তিনি আরো জানান, প্ল্যাটফর্মের তুলনায় ট্রেনের দৈর্ঘ্য বড় হওয়ার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমরা বিষয়টি লক্ষ্য করছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া স্টেশনের স্টেশনমাস্টার সাইদুজ্জামান জানান, এটি একটি সাময়িক অসুবিধা। আমরা ইতিমধ্যে নতুনভাবে প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি খুব শিঘ্রই নতুন প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ শুরু হলে যাত্রীদের ট্রেনে উঠা নামার ভোগান্তি লাঘব হবে।