ফরিদপুরের সদরপুরে একটি বাজারের খাস জায়গায় সরকারি শৌচাগার (টয়লেট) নির্মাণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সামসুল বেপারি নামের এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের জয়বাংলা বাজারে নির্মাণিধীন ওই শৌচাগার নির্মাণের সময় বাধা দেন তিনি।
সামসুল বেপারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর ঘনিষ্ঠজন বলে জানা গেছে। এছাড়া সে জয়বাংলা বাজার কমিটির সহ-সভাপতিও।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জয়বাংলা বাজারে হাট বসে। যে হাটে আশপাশের কয়েক হাজার লোকের সমাগম ঘটে। কিন্তু, ওই বাজারে কোনো শৌচাগার নেই। তাইতো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলে সবাইকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
এদিকে, বাজারের খোলা খাস জায়গায় সরকারি টয়লেট নির্মাণে বাধা দেওয়ায় প্রতিকার চেয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই বাজারের অর্ধশতাধিক সাধারণ দোকানদার।
জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তারা চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের জয়বাংলা বাজারের দোকানদার। ওই বাজারে সরকারি অনুদানে টয়লেট নির্মাণে ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয় এবং টেন্ডার অনুযায়ী যথাসময়ে খাস জায়গায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে, কিন্তু খাস জায়গার পাশে জায়গার মালিক সামসুল বেপারিসহ তার অনুসারীরা কাজ করতে বাধার সৃষ্টি করলে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। অতঃপর ইউএনও এসে তড়িঘড়ি করে খাস জমি ৭ ফিট কমিয়ে ফেললে টয়লেটের নির্মাণের স্থান পরিবর্তন এবং টয়লেটের ডিজাইন পরিবর্তন করে কাজ করার নির্দেশ দেন। তবে, ঠিকাদার উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে যোগাযোগ করে জানান ওই ডিজাইনে কাজ করা সম্ভব নয়। সেটা ইউএনওকে জানান তিনি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্মাণাধীন টয়লেটের খাস জায়গার কিছু অংশে দুটি ঘরের বারান্দা নির্মাণ করা হয়েছে। যে ঘর ওই বাজার কমিটির সহ-সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল বেপারি তার প্রভাব বিস্তার করে নির্মাণ করেছেন বলে বাজারের সাধারণ দোকানদারদের দাবি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জয়বাংলা বাজার কমিটির সহ-সভাপতি সামসুল বেপারি। সে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা নন বলে জানান। তিনি দাবি করেন, তিনি এখন বিএনপির রাজনীতি করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত জায়গায় দোকান নির্মাণ করেছি। আমি কোনো সরকারি খাস জমি দখল করিনি। এছাড়া টয়লেট নির্মাণেও কোনো বাধা দেইনি। এসব আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ।
এ ব্যাপারে শৌচাগার নির্মাণকারী ঠিকাদার সুজন দত্ত বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে জানান, ওই বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও দোকানদার জানিয়েছেন সামসুল বেপারি সরকারি খাস জমি দখল করে দোকানের কিছু অংশ ও সরকারি টয়লেটেরও কিছু অংশ দখল করে নিয়েছেন। তাই জায়গা সংকুলানে স্ট্রাকচারের ডিজাইন জটিলতা হওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমার ৬ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত।
এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সার্ভেয়ার নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করি। সেখানে জমি মাপার পর টয়লেট নির্মাণের জায়গা কিছুটা কমে আসে। তবে সামসুল বেপারি সরকারি জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করার বিষয়টি পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, টয়লেট নির্মাণের জায়গা সার্ভেয়ার দিয়ে মাপা হয়েছে। তারপর খাস জায়গা কম থাকায় ঠিকাদারকে এল আকৃতির টয়লেট নির্মাণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, ঠিকাদার এভাবে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। তারপর আমি উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। একইসঙ্গে বিকল্প স্থানে টয়লেট নির্মাণ করা যায় কি-না সেটা বলা হয়েছে। অতি শিগগিরই এ ব্যাপার সমাধান করা হবে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।