ঢাকাই সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ বলেই খ্যাত ছিলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার ওরফে সারাহ বেগম কবরী। গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ছিলেন তিনি।
তার মিষ্টি অভিনয় ও মিষ্টি হাসি সবাইকে মুগ্ধ করত।
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন কবরী। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল মারা যান তিনি।
জন্মসূত্রে কবরীর নাম ছিল মিনা পাল। তার বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্যপ্রভা পাল। জন্মস্থান বোয়ালখালী হলেও শৈশব ও কৈশোর বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরীতে। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব হয় তার।
১৯৬৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ সিনেমার নায়িকা হিসেবে অভিনয় জীবনের শুরু কবরীর। এরপর অভিনয় করেছেন ‘হীরামন’, ‘ময়নামতি’, ‘চোরাবালি’, ‘পারুলের সংসার’, ‘বিনিময়’, ‘আগন্তুক’ সিনেমায়।
জহির রায়হানের তৈরি উর্দু সিনেমা ‘বাহানা’তে অভিনয় করেন কবরী। ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের কালজয়ী ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করারও সুযোগ পেয়েছিলেন এই বরেণ্য অভিনেত্রী।
কবরী অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সোনালী আকাশ’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘জলছবি’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘দর্প চূর্ণ’, ‘লালন ফকির’, ‘রংবাজ’, ‘মাসুদ রানা’, ‘সুজন সখী’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘গুণ্ডা’, ‘আঁকাবাঁকা’, ‘কত যে মিনতি’, ‘অধিকার’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘বধু বিদায়’, ‘আরাধনা’, ‘বেইমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘কাচ কাঁটা হীরা’, ‘উপহার’, ‘আমাদের সন্তান’, ‘হীরামন’, ‘দেবদাস’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘দুই জীবন’ ইত্যাদি।
১৯৭৮ সালে ‘সারেং বউ’-এ অনবদ্য অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান কবরী। এছাড়া ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
কবরীর ছিল বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। যুক্ত ছিলেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে।