গেলবারও রমনার বটমূলে বিশ্বকবি রাবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গেয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে পারেননি ছায়ানটের শিল্পীরা। এবছরও উৎসবের কোনও আয়োজন ছাড়াই একেবারে ঘরোয়াভাবে বৈশাখকে বরণ করে নিচ্ছে বাঙালি। প্রতিবছর নববর্ষের দিন সব বয়সী মানুষের পদচারণায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চল উৎসব মুখরহয়ে উঠে। কিন্তু করোনার সংক্রমণের এই ভয়াল সময়ে গেল বছরের মতো এবারও বৈশাখ ঘিরে কোনও উৎসবের আমেজ নেই। বিপরীতে বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের কিছু টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ছাড়া ঘরের বাইরে কোনও ধরনের আয়োজন না রেখেই আজ সারা দেশে উদযাপন করা হবে বাংলা নববর্ষ ১৩২৮ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাল উদযাপন অনুষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি সব টেলিভিশনে একযোগে সম্প্রচার করা হবে।
বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপিত হয় বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হয় বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা।
গেল বছরের মতো এবারও সব কেড়ে নিয়েছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। বণ-গন্ধহীন এক নববর্ষ আজ বাঙালির ঘরে। করোনার সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়াতে পহেলা বৈশাখে সব ধরনের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।
করোনার কারণে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রাপ্ত মঙ্গল শোভাযাত্রা এবারও হচ্ছে না। অন্যান্য বছর বৈশাখ ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করে। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও সেখানে সুনসান নীরবতা, নেই কোনও ব্যস্ততা। তবে এবার জনসমাগম এড়িয়ে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন অঙ্কন ও চিত্রনে করোনা পরিস্থিতির বার্তা তুলে ধরে এবার বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘কাল ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর’।
বৈশাখের প্রথম দিন সকালে চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন মুখোশ ও প্রতীক নিয়ে অনুষদ প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্তভাবে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রতীকী এই শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
এতে আরও অংশ নেন, বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়াসহ চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রমনার বটমূলে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে আসছে ছায়ানট। শুধু ১৯৭১ সালেই এর ব্যতিক্রম হয়েছিল। তবে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছরও তারা এ আয়োজন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত সাড়ে ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঙালি জাতির আপন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ১৫৫৬ সালে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা পঞ্জিকা চালু করেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ অংশের অধীনস্থ তৎকালীন ‘সুবাহ বাংলা’ অঞ্চলে ভূমি কর আদায়ের সময়কে সহজ করার জন্য এর প্রচলন হয়েছিল।
এদিকে নববর্ষ উপলক্ষে দেশে-বিদেশে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।