করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে আট দিনের কঠোর লকডাউন। সরকারের একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এটি অত্যন্ত কঠোর লকডাউন হবে। এই লকডাউনে সব ধরনের অফিস ও পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই সময় সব সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস বন্ধ রাখতে বলা হলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিল্প কারখানা চালু রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে শপিংমল বন্ধ থাকবে।
কাঁচাবাজারে উন্মুক্তস্থানে কেনাবেচা হবে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। হোটেল-রেস্তোরাঁ নির্দিষ্ট সময় শুধু খাবার বিক্রি, সরবরাহ করতে পারবে। এই সময় অতি জরুরি দরকার ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা নিতে যাওয়া যাবে।
যা আছে বিধিনিষেধে : প্রজ্ঞাপনে ১৩টি নির্দেশনা বা বিধিনিষেধ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস/ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। সব রকম পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি)।
খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/ জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, লাশ দাফন/ সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা নেয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে; খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাবার বিক্রি/ সরবরাহ (কিনে নিয়ে যাওয়া/ অনলাইন) করা যাবে।
শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে; কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। বোরোধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষিশ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত টহল জোরদার করতে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
এতে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন; শুক্রবারের জুমা ও আসন্ন রোজায় তারাবির নামাজের জামাত কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে করা যায়, সে বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে; এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনাও জারি করতে পারবে।
এদিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি ঘোষিত লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া ও ফিরে আসার জন্য পুলিশের বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে আলাদা মুভমেন্ট পাস নিতে হবে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া আট দিনের লকডাউন চলাকালে জনসাধারণের এই পাস নিতে হলেও গণমাধ্যমকর্মীদের এই পাস লাগবে না। তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রই মুভমেন্ট পাস হিসেবে গণ্য করা হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের মহাপরদির্শক (আইজিপি) লকডাউনে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ এই অ্যাপের উদ্বোধন করেন। মুভমেন্ট পাস নামের অ্যাপটি উদ্বোধনের পর প্রতি মিনিটে ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়লেও সন্ধ্যার দিকে তা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার। প্রথম ঘণ্টায় আবেদন জমা পড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার। মঙ্গলবার অ্যাপটির উদ্বোধন করেন।
দুপুরের দিকে অতিরিক্ত চাপ থাকায় মুভমেন্ট পাসের (https://movementpass.police.gov.bd) এই ওয়েব ঠিকানায় ঢোকা যাচ্ছিল না বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পরে সার্ভারের সংখ্যা আরও বাড়ালে সন্ধ্যার দিকে তা স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সারা দেশ থেকে পুলিশের মুভমেন্ট পাসের জন্য ৬ লাখ আবেদন করা হয়। এর মধ্যে ৬০ হাজার আবেদনে পূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩০ হাজার আবেদনকারী মুভমেন্ট পাস পেয়েছেন।
লকডাউনে বাসা থেকে নিতান্ত প্রয়োজনে কাউকে বের হতে হলে মুভমেন্ট পাসের জন্য ওপরের ওয়েব ঠিকানায় ঢুকে আবেদন করতে হবে। শুরুতে একটি সক্রিয় মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে। আবেদনকারী কোথা থেকে কোথায় যাবেন, তা জানতে চাওয়া হবে। সেই সব তথ্য ধাপে ধাপে দিতে হবে।
এরপর আবেদনকারীর একটি ছবি আপলোড করে আবেদন জমা (সাবমিট) দিতে হবে। এরপর ফিরতি মেইল বা বার্তা আবেদনকারীকে পাঠানো হবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট নেওয়া যাবে। প্রিন্ট কপিটিই মুভমেন্ট পাস হিসেবে গণ্য করা হবে।