করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশের দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমানোর স্বার্থে গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারে মূল্য কমানো হয়েছে। নতুন তালিকায় ছয়টি ক্যাটাগরিতে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগের চেয়ে প্রতিটি ক্যাটাগরিতে ফি গড়ে ২০০ টাকা করে কমানো হয়েছে। একইসঙ্গে করোনাকালে রাতে রোগীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ১০০ টাকা।
বুধবার(১৪ এপ্রিল) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার এ তথ্য গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
ডা.মুহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, নতুন তালিকা অনুযায়ী, অতিদরিদ্রদের জন্যে ডায়ালাইসিসে প্রতি সেশনের ফি ৬০০ টাকা। আবার কেউ সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিস করালে খরচ আরও কমে পড়বে এক হাজার ৪০০ টাকা। আর চতুর্থ শিফটে (রাত ১০টা-ভোর ৬টা) ফি পড়বে ৪০০ টাকা ও প্রতি তিন সেশনে এক হাজার টাকা। দরিদ্রদের জন্যে প্রতি সেশনের ফি ৮০০ টাকা। সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিস করালে খরচ পড়বে এক হাজার ৮০০ টাকা। চতুর্থ শিফটে ফি পড়বে ৫০০ টাকা ও প্রতি তিন সেশনে এক হাজার ২০০ টাকা।
তিনি জানান, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্যে প্রতি সেশনের ফি যথাক্রমে এক হাজার ও এক হাজার ৩০০ টাকা। সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিসের খরচ যথাক্রমে দুই হাজার ৫০০ ও তিন হাজার ৫০০ টাকা। চতুর্থ শিফটে ফি পড়বে যথাক্রমে ৭০০ ও এক হাজার ১০০ টাকা এবং প্রতি তিন সেশনে এক হাজার ৮০০ ও তিন হাজার টাকা। উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও ধনীদের জন্যে প্রতি সেশনের ফি যথাক্রমে দুই হাজার ও দুই হাজার ৫০০ টাকা। সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিসের খরচ পড়বে যথাক্রমে পাঁচ হাজার ও সাত হাজার টাকা। চতুর্থ শিফটে ফি পড়বে যথাক্রমে এক হাজার ৫০০ ও দুই হাজার টাকা এবং প্রতি তিন সেশনে চার হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে হতদরিদ্র মানুষের অসহায়ত্ব দেখে আমরা খুবই ব্যথিত ও মর্মাহত। বর্তমানে দেশের মানুষের আয়ের সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ কারণে আমরা সেই নিম্ন আয়ের রোগীদের জন্য চিকিৎসা সেবা আরও সহজলভ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে আমাদের এখানে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা তিন শিফটে ডায়ালাইসিস করা হতো। এখন রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত চতুর্থ শিফটেও ডায়ালাইসিস চলবে। দূর থেকে আসা রোগীদেররাতে বাড়ি পৌঁছে দেয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আমাদের এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৮০-৩০০ রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয়। এ সংখ্যা ৩৫০ হলে আমরা ব্রেক ইভেনে যেতে পারতাম। এজন্য এখন আমাদের মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হচ্ছে। তবে আমাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের গুটিকয়েক উচ্চবিত্ত ও মানবদরদী মানুষ- বলেন তিনি।
এ বিষয়ে সহায়তা চেয়ে সরকারকে বহু চিঠি দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করেও কয়েকবার বলেছি। কেউ একটিবার আমার কথা কানে তুলেনি। দেশের অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কথা কেউ ভাবেনি।
সরকার দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি দেয় না, দেয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে’এ অভিযোগ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জাতীয় কিডনি রোগ ইনস্টিটিউটে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান শ্যানডরকে দরিদ্র কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সুবিধা দেয়ার জন্য রোগী প্রতি প্রায় দুই হাজার টাকার বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। অথচ দেশের বৃহত্তম গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের অতিদরিদ্র, দরিদ্র এবং নিম্নবিত্ত রোগী প্রতি মাত্র এক হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে সরকারের কীসের এতো অপারগতা, তা আমার বোধগম্য নয়।
ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, এ বছর আমাদের ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের চার বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। তাছাড়া, করোনা মহামারি, রমজান, পয়লা বৈশাখ সবকিছু মিলিয়ে দেশের হতদরিদ্র মানুষের সার্বিক কল্যাণে ডায়ালাইসিস চার্জ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মূল্য ছাড়ের বিষয়টি আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। এর পাশাপাশি আমরা আমাদের সার্ভিসও বাড়িয়ে দিয়েছি। বৈশাখের প্রথমদিন থেকেই তা কার্যকর হবে’-বলেন তিনি।
ডা. মুহিব উল্লাহ বলেন, আমরা রোগীর খরচ কমাতে চাই। এ কারণে স্বাস্থ্য বিমা পদ্ধতি চালু করেছি। যার যেমন আয়, তেমন ব্যয়, তবে সেবার মান সবার জন্য সমান। স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আয়ের ভিত্তিতে রোগীদের ছয়টি (অতিদরিদ্র, দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও ধনী) ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি।
বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে ডা. মুহিব উল্লাহ বলেন, আমাদের এখানে রোগী আসলে প্রথমে তাকে ‘স্বাস্থ্য বিমা’র আওতায় আবেদন করতে বলি। সদস্য হওয়ার পর তার আয়সহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার ডায়ালাইসিস চার্জে ভর্তুকি প্রদান করি। উচ্চবিত্তদের যাকাত ও অন্যান্য সহায়তামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা সেই ভর্তুকির ব্যবস্থা করে আসছি। আরেকটা বিষয় হলো, যারা অতিদরিদ্র ও দরিদ্র, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীকে তেমন কোনো অর্থই মূলত দিতে হয় না। আমাদের যাকাত ফান্ড রয়েছে। সেই ফান্ড থেকে তাদের ডায়ালাইসিসের ফি নেওয়া
হয়।
‘স্বাভাবিক নিয়মে রোগীদের সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিস করতে হয়’জানিয়ে ডা. মুহিব উল্লাহ বলেন, আমাদের এখানে কেউ সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিস করলে এবং তিনি ‘স্বাস্থ্য বিমা’র সদস্য হলে, সেখানকার চার্জের ওপরও আবার তাকে ভর্তুকি দেয়া হবে। আসলে আমরা রোগীর ব্যয়কে সর্বনিম্ন অবস্থায় নিয়ে আসতে চাই।