করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফুসফুসের সিটি স্ক্যান রিপোর্ট ভালো বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাত পৌনে ১০টার দিকে বেগম জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি এভার কেয়ার হাসপাতালে প্রবেশ করে। ১০টার দিকে তাঁর সিটি স্ক্যান করা হয়। সাড়ে ১০টার দিকে তাকে বহন করা গাড়ি বাসার উদ্দেশে রওয়ানা করে ১১টার কিছু আগে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌছাঁয়।
রাতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সিটি স্ক্যান রিপোর্ট ভালো। তবে শঙ্কামুক্ত বলার সময় এখনও আসেনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ১২ থেকে ১৪ দিন যাওয়ার পর বলা যাবে রোগী শঙ্কামুক্ত নাকি সুস্থ। আমরা শুক্রবার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাব। তখন বিস্তারিত বলা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ডাক্তারদের আগ্রহ ছিল ম্যাডামের ফুসফুসের কী অবস্থা তা দেখার জন্য। তাই আজকে হাসপাতালে তাঁর সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। আমরা এর ক্লিনিক্যাল (প্রোভিশনাল রিপোর্ট) প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ রিপোর্টের এখন পর্যন্ত যে ফাইন্ডিং পাওয়া গেছে, এতে ম্যাডামের ফুসফুসের অবস্থা অত্যন্ত মিনিমাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে যা চিকিৎসা দেয়া দরকার তা লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানসহ অন্যান্য ডাক্তাররা আলোচনা করে কোনও ওষুধ প্রয়োজন হলে যোগ করবেন।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদেরকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত কেয়ারফুলি অবজার্ভ করতে হবে। এটা আগামী ১৪ দিন তাঁকে সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। যে কোনও পরিস্থিতিতে যে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতিও রয়েছে। অতি দ্রুত যেন করোনা থেকে মুক্তি পান তার জন্য দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, ‘করোনার যে উপসর্গগুলো অন্যান্য রোগীর ক্ষেত্রে থাকে, সেইগুলো ম্যাডামের ছিল না। শুক্রবার সিটি স্ক্যানের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে এখনও শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।’
গতকাল বিকেলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা শেষে অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত দুদিনে ম্যাডামের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থার রিপোর্ট করেছি। তাতে আমরা দেখেছি, উনার শারীরিক অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। উনার অক্সিজেন সেচুরেশন ভালো আছে। ব্লাডের রিপোর্টও ভালো আছে। তবে গতকাল রাতে উনার জ্বর ছিল, আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেও জ্বর ছিল একশর মতো। তবে উনি ভালো আছেন, স্টেবল আছেন।’
শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দেখভাল করছেন এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক।
গতকাল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে এফ এ সিদ্দিকী বলেন, ‘কোভিডের পরিভাষায় ম্যাডাম এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে আছেন। আর কোভিডের সব বড় সমস্যা হয় দ্বিতীয় সপ্তাহেই। তাই সে বিষয়েও আমরা সতর্ক আছি। আমরা এখন উনার সিটি স্ক্যান করাব।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মানসিক অবস্থা ভালো আছে। আর উনি নিজেই বলেছেন যে, উনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেটা ফিল করছেন না। তিনি বলেছেন, টেস্ট না হলে তো কিছু বুঝতামই না। তাতে বলা যায়, উনার মানসিক অবস্থা ভালো আছে।’
গত রবিবার (১১ এপ্রিল) খালেদা জিয়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের বেশ কয়েক ঘণ্টা পর ওইদিন বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে বেগম জিয়ার কোভিড ‘পজিটিভি’র কথা স্বীকার করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।