ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম গঠনে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে করোনা মোকাবিলায় হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রবিবার (১৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় ‘করোনা পরিস্থিতি ও জনজীবনের সংকট’ বিষয়ে এক নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তব্যে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন।
এ সময় তিনি বলেন, শুধু আইসিইউ এর সংখ্যা বৃদ্ধি করলে চলবে না। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে যেন তারা প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগীদের সুবিধার্থে অক্সিজেনের ওপর ভ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।
ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিমের মাধ্যমে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, শুধু টাকা পয়সা নয়, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিৎ করতে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকেরও প্রয়োজন। এছাড়া চট্টগ্রাম বাশখালীর ঘটনাকে বিনা বিচারে হত্যার শামিল উল্লেখ করে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে সোচ্চার হবার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বেলার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওনা হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নাঈম জাহাঙ্গীর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর ও রাষ্ট্র চিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইউম প্রমুখ।
বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামা শ্রমিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা করে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী নিহতদের তালিকা প্রকাশ ও অপরধীদের বিচারের দাবি করেন। এছাড়া লকডাউনে প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যের নিশ্চয়তা দেবার পাশাপাশি, করোনার টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি ও চিকিৎসায় সরকারকে ভর্তুকি দেবার আহ্বান জানান। এছাড়া কারখানার শ্রমিকদের বেতন নিশ্চিত করা, মোদীবিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতারকৃদের মুক্তি ও শিক্ষার্থীদের বেতন মৌকুফের দাবিসহ কয়েকদফা দাবি পেশ করেন।
বেসরকারী পর্যায়ের সেবাদানকারী প্রপ্তিস্থান গুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, জবাবদিহিতা নেই বলেই সরকার জনগণের প্রতি এমন দায়িত্বহীন আচরণ করতে পারছে। নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ঘটনায় তিনি পুলিশের আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, হেফাজতে ইসলামের অনুসারীদের সমাজের অংশ দাবি করে তাদের কথা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জুন সরকারকে আহ্বান জানান। সরকারকে কর্তৃত্ববাদী আখ্যা দিয়ে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে লকডাউনের নামে দমন পীড়নের অভিযোগ করেন।
এছাড়া প্রফেসর দিলারা চৌধুরী ও সৈয়দা রিজওনা হাসান করোনা মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে সরকারকে ব্যর্থ বলে অবিহিত করে এই মহামারির বিরুদ্ধে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। জনসধারণের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানোর পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করার প্রতিও তারা গুরুত্ব আরোপ করেন।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু তার বক্তব্যে ৩টি দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- অসহায় এবং সামর্থহীনদের সরকার বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, গরীব ও কর্মহীনদের দ্রুত সরকার বিনামূল্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করা, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৭ এপ্রিল মজিব নগর দিবসে পুলিশ গুলি করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করার অপরাধে পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদের পদত্যাগ করতে হবে।
সাংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী।