করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনের মধ্যেই সংক্রমণের সঙ্কা নিয়েই আজ থেকে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বেশ কিছু শর্তে দোকান মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে এতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কার কথাও বলেছেন রোগবিশেষজ্ঞেরা।
ঈদুল ফিতরের আগে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে রাজধানীর দিকে ছুটে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে দক্ষিণবঙ্গমুখী শিমুলিয়া ঘাটে আজ যাত্রীদের চাপ বাড়তে দেখা গেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিধি-নিষেধের মধ্যেই যে যেভাবে পারছেন ঢাকায় আসার চেষ্টা করছেন।
সরকার ঘোষিত ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ যাত্রী চলাচল কিছুদিন ধরে শিথিল থাকলেও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ।
গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় শাখার উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে রোববার থেকে দোকানপাট-শপিংমল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে খোলা রাখা যাবে। বিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার বা সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কমাতে গত ৫ এপ্রিল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তবে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক ইত্যাদি খোলার রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এর একদিন পরে রাস্তায় গণপরিবহনের সংকট দেখা দিলে ৭ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন এলাকা গণপরিবহণ চলার অনুমতি দেয় সরকার। পরে সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর বিধি-নিষেধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তা ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর আগে করোনা মোকাবিলায় জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি বৈঠক করে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহে উন্নীত করার সুপারিশ করে। সেই আলোকে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধি-নিষেধ বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পায়।
কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান মালিকেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখার অনুমতি চেয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। এবার সরকার তা বিবেচনায় নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করল।
এমন এক সময়ে সরকার এই দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, যখন দেশে করোনা পরিস্থিতি গত এক বছরের মধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। টানা কয়েকদিন একশর বেশি মৃত্যু হওয়ার পর তা এখন একটু কমেছে। সবশেষ, গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৯৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া দেশে মোট সাত লাখ ৪২ হাজার ৪০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
এছাড়া দেশে নতুন করে করোনার নাইজেরিয়ান ধরন শনাক্তের কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর সঙ্গে করোনার অধিক সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন ভারতীয় ধরনের আশঙ্কাও রয়েছে।