ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় আল আমিন খান নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে ওই ছাত্রীর নামে পাঁচকাঠা জমি লিখে দেওয়া শর্তে ওই ছাত্রীর বিয়ে দেয় গ্রাম্য শালিসদাররা।
স্থানীয়রা জানায়, যুবক আল আমিন খান (২৬) দশম শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এতে সে ছাত্রী রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে আল আমিন তার দুই মামাতো ভাইকে নিয়ে মেয়েটির বাড়ি যান। কৌশলে দরজা খুলে কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর ধর্ষণ করেন। এতে মেয়েটি জ্ঞান হারালে রাস্তার পাশে একটি বাগানে তাঁকে ফেলে রেখে চলে যান তারা। পরের দিন সকালে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে জ্ঞান ফিরে এলে মেয়েটি তার পরিবারের কাছে ধর্ষণের ঘটনা জানায়।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আল আমিন ও তার লোকজন মেয়েটির পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করে। থানায় অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলেও চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত অভিযোগ দিতে যেতে পারেনি। আল আমিনের পরিবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য দিনভর তদবির শুরু করে। পরে নানা চাপের মুখে মেয়েটির পরিবার ধর্ষণের ঘটনা পুলিশকে জানায় নি।
এ সুযোগে শুক্রবার নলছিটি উপজেলার সরমহল গ্রামে আল আমিনের বাড়িতে মেয়ে পক্ষের লোকজন নিয়ে বৈঠক করেন স্থানীয় নারী ইউপি সদস্যর স্বামী টিপু হাওলাদার, ওই গ্রামের সোহেল ফরাজী, রোকন, সোহেল ও দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন। এক পর্যায়ে ধর্ষণের ঘটনার জন্য উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ওই কিশোরীকে বিয়ে করতে রাজি হয় আল আমিন।
পরে স্থানীয় এক কাজী ডেকে দুই লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে পড়ানো হয়। এ সময় মেয়ের নামে পাঁচ শতাংশ জমি দলিল করে দেওয়ার জন্য আল আমিন লিখিত চুক্তি করেন। আল আমিন পেশায় মোটরসাইকেল চালক। তার বাবা রশিদ খান সরমহল গ্রামের একজন কৃষক। মেয়েটির বিয়ের বয়স না হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও বিয়ের তারিখ দেখায়নি কাজী মো. জহিরুল ইসলাম। বিয়ে নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও বিয়ে পড়ানো কাজিসহ একটি ছবি পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত এক যুবক বলেন, ছেলে ও মেয়ের পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। কাজী নিকাহ রেজিস্ট্রারে উভয় পক্ষের সাক্ষীদের স্বাক্ষর নিয়েছেন। আল আমিনও স্বাক্ষর করেন। এসময় আল আমিন ওই মেয়েটির নামে পাঁচ শতাংশ জমি লিখে দিবে বলে লিখিত দেন।
বিয়ের কাজী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, মৌখিকভাবে কথাবার্তা হয়েছে। এখনো বিয়ে পরানো হয়নি, কারণ মেয়ের বয়স হয়নি। বয়স সম্পন্ন হলে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হবে।
বাল্যবিবাহ এবং ধর্ষণের শালিস বেআইনী হলেও এ ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও কাউকে আটক করেনি। কোন আইনি পদক্ষেপ না নিলেও বিষয়টি পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ বলেন, এ রকমের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। ধর্ষণ বা বিয়ের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এমন ঘটনা গ্রাম্য সালিশে মিমাংসা করার কোনো সুযোগই নাই। আমাকে ইউপি চেয়ারম্যানও যদি জানাতো আমি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ব্যবস্থা নিতাম।