মহামারি করোনা ভাইরাস ঝেঁকে বসেছে ভারতে। গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণে রেকর্ড হচ্ছে দেশটিতে। এ অবস্থায় দেশটিতে অক্সিজেনের অভাব প্রকট রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে না অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ। অক্সিজেনের অভাবে করোনা আক্রান্ত স্বামীকে বাঁচাতে মুখ দিয়ে শ্বাস দিচ্ছেন স্ত্রী এমন ছবি ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুখে শ্বাস দিয়ে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা!
বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিও বর্তমানে বেশ নাজুক। করোনার প্রাদুর্ভাব আরও বাড়লে দেশেও কী অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে?
ইতোমধ্যে দেশে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ ১০ দিনে এক হাজার রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ঘোষিত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরও এক সপ্তাহ বাড়বে বলে জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশেও ভারতের মতো অক্সিজেন সংকট হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত প্রায় এক মাসে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।
এদিকে দেশের মোট অক্সিজেন চাহিদার বড় একটি অংশ আসে ভারত থেকে। সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সরবরাহও এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশে মেডিকেল অক্সিজেনের দৈনিক চাহিদা ১০০-১২০ টন। বর্তমানে এ চাহিদা বেড়ে হয়েছে ১৫০-১৮০ টন। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিনের ১০০ টন বিবেচনায় বর্তমানে চাহিদা বেড়েছে ৮০ শতাংশ। চাহিদা বৃদ্ধির এ উল্লম্ফনের পরিপ্রেক্ষিতে অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, অক্সিজেন সংকট এখনো দেখা দেয়নি। তবে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরবরাহ ঠিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উৎপাদকদের।
চিকিৎসকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি মাত্রায় বেড়েছে। এছাড়া করোনার নতুন ধরন (স্ট্রেইন) অতি মাত্রায় সংক্রামক। ফলে রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই অল্প সময়ের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে বেশি সংখ্যক রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
দেশে অক্সিজেন চাহিদার ৯০ শতাংশই পূরণ করে লিনডে বিডি। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সাইকা মাজেদ সাংবাদিকদের বলেন, মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায় প্রায় দুই মাস দ্বিগুণেরও বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে শিল্প কারখানার অক্সিজেন উৎপাদন। ‘বর্তমানে যে চাহিদা সেটা সরবরাহ করা সম্ভব। তবে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সরকারকে জানানো হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেছেন, সংকট মোকাবিলার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সরবরাহ করছে, তাদের আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান আছে, তারা হান্ড্রেড পারসেন্ট ক্যাপাসিটিতে চলছে। তারপরও কুল পাচ্ছে না।আমরা তাদের অ্যালাউ করেছি চীন, পাকিস্তান থেকে কিছু ইমপোর্ট করার জন্য। সেই ইমপোর্ট কাজও চলছে। কাজেই ওইভাবেই আমরা অক্সিজেনটা মিটআপ করছি।