ভারত জুড়ে ভয়ানক থাবা বসিয়েছে করোনা। প্রতিদিনই মৃত্যু ও শনাক্তে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ছে দেশটিতে। ভারতে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে কোভিডের ‘ডাবল’ বা ‘ট্রিপল মিউটেশন’ ভ্যারিয়েন্টকে। ভারতীয় এই ভ্যারিয়েন্টে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই ধরন অতিমাত্রায় সংক্রামক এবং বেশি প্রাণঘাতী বলে বলা হচ্ছে। তাই চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ।
ভারতীয় এই ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে দুই সপ্তাহের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এবার ভারতীয় এই নতুন করোনার ধরন আতঙ্ক তৈরি করেছে গোটা বিশ্বে। আর এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
তাদের মতে, আমাদের সাথে ভারতের মানুষ ও পরিবেশের বেশি মিল থাকায় এই ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার নাজমুল হাসান বলেছেন, ভারতে যে অবস্থা চলছে, তা আমাদের জন্য সত্যিই উদ্বেগের। কারণ যুক্তরাজ্য কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষের জেনেটিক্যালি অনেক পার্থক্য থাকলেও ভারতের মানুষ ও পরিবেশের সঙ্গে আমাদের তেমন পার্থক্য নেই। ফলে ওই ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়লে তা ভয়াবহ পরিণতি ঘটাতে পারে। এ জন্যই আমরা সবাইকে সতর্ক থাকতে বলছি।
ভারতীয় ধরন ঠেকানোর ওপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। এ জন্য তারা ভারতের সঙ্গে সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করারও পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের দাবি উঠেছিল রাজনৈতিক মহলেও। সেই প্রেক্ষাপটে গত রোববার ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
তবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে বলা হয়েছে। যদিও আকাশপথে গত ১৪ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের।
এদিকে, গত রোববার এক আন্তমন্ত্রণালয় এক বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে দুই সপ্তাহ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে লোকজনের যাতায়াত বন্ধ থাকবে। তবে স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চলবে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত বন্ধ করা হলেও বাংলাদেশ-ভারতে অনানুষ্ঠানিক যাতায়াতের বিষয়েও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তবে বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সীমিত সময়ের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গণপরিবহন চালুর ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এতে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত না হলেও দেশে এরই মধ্যে নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্টের (বি.১.৫২৫) অস্তিত্ব মিলেছে।
তবে নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্ট খুব বেশি বিপজ্জনক না হলেও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে দেশে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।