প্রচণ্ড গরম আর দাবদাহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট যখন ঘনীভূত হচ্ছে, ঠিক এমন সময় ৩ মাসের লম্বা ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।
তার ছুটির আদেশে বলা হয়েছে, এসময় পরিচালক (উন্নয়ন) এমডির দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তাকসিম এ খান কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাননি। নিজেই নিজের ছুটির অফিস আদেশ জারি করে নিজেকে অনলাইনে এমডির দায়িত্ব দিয়ে দেশ ছেড়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের ছুটিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে কাউকে ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তাকসিম এ খান কোনোটাই করেননি।
ওয়াসা এমডি স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী, ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিনি ছুটি কাটাবেন। কোনও কারণে ওই সময়ে ছুটি কাটাতে না পারলে যাত্রার তারিখ থেকে পরের তিন মাস ছুটি কার্যকর থাকবে। চিকিৎসা ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য তিনি এ ছুটি নিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে তাকসিম এ খান রওনা দিয়েছেন বলে ওয়াসার জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, বিদেশে অবস্থানের সময় যেকোনও পলিসি এবং অন্যান্য বিষয়ে তাকসিম এ খান নিজে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। এর জন্য ই-নথি, ই-জিপি, ই-মেইল, ফেসটাইম, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করবেন।
সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন তাকসিম এ খান সংস্থার সব বিভাগীয় প্রধান নিজ নিজ রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। সার্বক্ষণিক যেকোনও প্রয়োজনে সরাসরি এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম এমডির পক্ষে বিভিন্ন সভায় প্রতিনিধিত্ব ও রুটিন কাজ করবেন।
গত ১৬ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ওয়াসা এমডির ছুটির আদেশ হয়। আদেশে ২০ মার্চ থেকে ১৯ জুন অথবা যাত্রা শুরুর দিন থেকে তিন মাসের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। তাতে এমডির ছুটিকালীন পরিচালক (উন্নয়ন) রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন বলা হলেও তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে বসে এমডির দায়িত্ব পালনের কথা কোথাও উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ) মুহম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী, এমডির দায়িত্বে থাকবেন ওয়াসা পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম। তার সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ হবে। তাকসিম এ খানের জারি করা অফিস আদেশ দেখিনি। এটা তার ইন্টারন্যাল ব্যাপার।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য প্রায় ১০ ঘণ্টা। ফলে ছুটিতে থাকাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব ওয়াসার এমডি পালন করতে পারবেন না।
প্রথম দফায় তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান ২০০৯ সালে। গত প্রায় এক যুগেও তাকে এ পদ ছাড়তে হয়নি। যদিও বিভিন্ন সময়ে ওয়াসার সেবার মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা আর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তিনি দফায় দফায় নিয়োগ পেয়েই গেছেন। প্রতিবারই অনিয়মের অভিযোগ উঠার পরও সবশেষ গত বছরের ১ অক্টোবর টানা ষষ্ঠবারের মতো তাকসিমকে ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ১১ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটিয়েছেন তাকসিম এ খান। সেবারও যুক্তরাষ্ট্রে বসেই নথিপত্রে স্বাক্ষরসহ সব কার্যক্রম চালিয়েছিলেন তিনি। তখন যাকে রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তার কাজ শুধু চিঠিপত্র আদান-প্রদানেই সীমাবদ্ধ ছিল।
অথচ দীর্ঘ সময়ের জন্য কেউ দেশের বাইরে গেলে অন্য কাউকে পূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তর করে যেতে হয় বলে মনে করেন সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও চাকরির বিধিবিধান-সংক্রান্ত একাধিক বইয়ের লেখক মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া।
তিনি বলেন, ‘কেউ অল্প কিছু দিনের জন্য দেশের বাইরে গেলে অন্য কাউকে রুটিন দায়িত্ব দেয়া যায়। কারণ রুটিন দায়িত্বটা অনেকটা পাহারাদারের মতো। দেখভাল করে রাখবে, এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে পূর্ণ দায়িত্ব ছাড়া সেটা সম্ভব হয় না।’