বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদারের রিকশা চালানোর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। মহান মে দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি সড়কে তিনি রিকশা চালান।
তার এই রিকশা চালানো ছবিসহ আরও বেশ কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর অনেকেই তাতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা রফিক বলেন, ‘মানুষ নানা কষ্টের কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। এ রকম এক কষ্টের কাজ হচ্ছে রিকশা চালানো। রিকশাচালক নিজেও মানুষ হয়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে অন্যদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, তারা রোদ, বৃষ্টিতে ভিজেও রিকশা চালাতে থাকেন। মাঝে মাঝে চোখে পড়ে ১৪-১৫ বছরের শিশুরাও রিকশা চালাচ্ছে, আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় বয়স্ক ব্যক্তি যিনি বয়সের ভারে নিজেই চলতে পারেন না অথচ জীবিকার তাগিদে তিনি রিকশা চালাচ্ছেন।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের চোখে অনেক সময় এসব ধরা দেয় না। কারণ এই অবহেলিত সমাজের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ও ধুঁকে ধুঁকে চলা এই শ্রেণিকে কারও কারও চোখে পড়ে না বা অনেকে দেখেও দেখতে চান না অথবা অবজ্ঞা করেন। কিন্তু আজ আপনাকে সমাজের একজন হিসেবে কথা চিন্তা করতে হবে। রিকশাচালকরাও সমাজের অংশ আর আমরাও সেই সমাজের অংশ। তাই সমাজের সদস্য হিসেবে আমাদেরও সমাজের অবহেলিত রিকশাচালকদের কথা ভাবতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের এই চালক ভাইয়েরা কষ্ট করে রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে নিজেদের আহারের ব্যবস্থা করেন আর আমাদের পৌঁছে দেন গন্তব্যে। কষ্ট করে যাত্রীদের টেনে নিতে গিয়েও মাঝে মাঝে তাদের বিভিন্ন অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। কিছু যাত্রী অকারণে ধমক, গালিগালাজ এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে গায়ে হাতও তোলেন পেটের দায়ে রিকশার প্যাডেল ঘোরানো এই চালকদের ওপর। অনেক যাত্রী ন্যায্য ভাড়া থেকেও কম দেন। প্রতিবাদ করে কথা বললে রিকশাচালকদের গায়ে হাতও তোলেন। তখন যাত্রীরা ভুলে যান রিকশাচালকরাও আমাদের মতো মানুষ, এই সমাজের একজন। রিকশাচালক বলে তাদের ছোট করে দেখা হয়।’
রফিক শিকদার বলেন, ‘প্রতিনিয়তই রিকশাচালকদের রক্ত ঝড়ছে। কখনো ঘামের মাধ্যমে আবার কখনো তথাকথিত ভদ্র যাত্রীদের দ্বারা। তাদের এই নীরব আর্তনাদ প্রতিনিয়ত আমাদের চোখে পড়ে, যখন কোনো বৃদ্ধ রিকশাচালককে সন্তানের সমান কারও কাছ থেকে কটুবাক্য শুনতে হয়, তখন বৃদ্ধ রিকশাচালক ব্যক্তির কেমন লাগে জানি না, তবে নিশ্চয়ই ভারো লাগে না। তাই ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে এবং নিজেকে তখন খুব অসহায় মনে হয় তাদের জন্য কিছু না করতে পেরে। আমরা যদি সবাই একটু ভাবি তাদের কথা, তারা কীভাবে একজন মানুষ হয়ে পেটের দায়ে, জীবিকার তাগিদে আরেকজন মানুষকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো বুঝি কিন্তু না বোঝার ভান করি।’
রিকশাচালকদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়ে রফিক শিকদার আরও বলেন, ‘রিকশাচালকদের দয়া নয়, তাদের ন্যায্যটুকু সঠিকভাবে পরিশোধ করুন এবং তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিক শ্রেণী, দিনমজুর শ্রেণী তথা রিকশাচালকদের প্রতি আমরা যেন সম্মান প্রদর্শন করতে পারি আমাদের মধ্যে সেই বোধটা তৈরি হোক, আমাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হোক। মূলত সেই উদ্দেশ্যেই আমার এই রিকশা চালানো।’
রফিক শিকদার বলেন, ‘এই করোনা মহামারিতে শ্রমিকদের প্রতি আরও সহনশীল হতে বিবেকবানদের এগিয়ে আসা উচিৎ। যানজটের অজুহাতে এই পেশার লোকদের উপার্জনের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে, কিন্তু তাদের পুনর্বাসনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে মনে হয় না।’