ছাত্র অধিকার পরিষদের আটককৃত ছাত্রদের ঈদের আগে জামিনে মুক্তির দাবিতে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের অর্ধশতর বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার রয়েছে।
শনিবার (৮ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বিচারপতির কাছে দেওয়া চিঠি তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেন সাংবিধান প্রনেতা ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, হাফিজ উদ্দিন খান, আ. স. ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, বদিউল আলম মজুমদার, নারী নেত্রী শিরিন হক, লেখক নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং জোনায়েদ সাকি।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালী বক্তব্য রাখেন ড. কামাল হোসেন, অনুষ্ঠিত সঞ্চালন ও চিঠি পাঠ করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বক্তব্য রাখেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারি জোনায়েদ সাকি। উপস্থিত ছিলেন লেখন নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বিচারপতির কাছে দেয়া চিঠি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
চিঠিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, পেনাল কোডসহ বিভিন্ন আইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সমাজকল্যান সম্পাদক আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অর্ধ শতাধিক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে। তাদের আদালতে হাজির করা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদাললত তাদের পুলিশ রিমান্ডে প্রেরণ করেছে।
গ্রেফতারের পর পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলার কথা বলেছে তা কয়েক মাস থেকে কয়েক বছরের পুরোনো এবং মামলাগুলো রাজনৈতিক হয়রানির জন্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি ও সামনের ঈদ সর্বোপরি ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমাদের সন্তানতুল্য এই ছাত্ররা অবিলম্বে জমিনে মুক্তি পাওয়ার অধিকারী বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে নিন্ম আদালতে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও পদ্ধতিগত জটিলতা কারণে তারা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রধান বিচারপতির কাছে বিশিষ্টজনদের দাবি:
১. গত দুই মাসে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতারকৃত সকল ছাত্রদের আগামী রোজার ঈদের আগে জামিন প্রাপ্তির জন্য আপনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
২. এরমধ্যে রিমান্ডে এবং করোনকালীন সময়ে তাদের প্রতি কোনো নিপীড়ন হচ্ছে কিনা তা তদন্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
৩. ডিজিটাল বাংলাদেশ আইনে যার বিরুদ্ধে কটুক্তি বা মানহানি করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ সংক্ষুদ্ধ হয়ে মামলা করতে পারবে না এ ধরনের নির্দেশনা প্রদান করুন।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ছাত্রদের জামিন দেয়া উচিৎ। জামিন একটা অধিকারের ব্যাপার। বিশেষ করে ছাত্র সমাজ ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে এসেছে। তারা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে জনমত গঠন করে, আন্দোলন করে। সেইগুলোকে আমরা সব সময় উৎসাহিত করেছি এবং এখনো সেটা হওয়ার কথা। অতীতে নিন্ম আদালত সাহসী ভুমিকা রেখেছে, অনেক সময় তারা জামিন দিয়েছে। উচ্চ আদালত পর্যন্ত আসতে হয়নি। জামিন সবারই অধিকার, জামিন পাওয়ার অধিকার সবারই আছে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামিন আমাদের মানবিক ও আইনগত অধিকার। আমাদের বিচারকগণ বিবেকবান নন। তারা অত্যাধিকভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত, পুলিশ নিয়ন্ত্রিত। আমরা প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বিচারে দীর্ঘ প্রক্রিয়া সবচেয়ে বড় অত্যাচার। আজ এক মাস হয়ে গেছে এখনো মামলা উঠে না।
একই ধরনের মামলা ৫টা দিয়ে রেখেছে। ৫ টার জন্য জামিন নিতে হয়। এ জায়গায় প্রধান বিচারপতির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। কয়দিন পরে ঈদ। ঈদের পূর্বে প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক শক্তির বলে এসব ছাত্রদের জামিনের ব্যবস্থা করতে বলেছি।