শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন

মা-ছেলের বন্দি জীবন
সবুজবাংলা টিভি
প্রকাশ রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

রংপুর মহানগরীর বধুকমলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশীদ। পেশায় অটো চালক। ৩ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের কাটছিল তাঁর সংসার। হঠাৎ সেই সুখের সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। বড় ছেলে দুখল মিয়া (৩০) হঠাৎ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এরপর থেকে তাকে ঘরের ভেতর শিকল বন্দি করে রাখা হয়। এর কিছুদিন পর তার মা দুলালী বেগমও (৫৫) মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকেও আলাদা ঘরে বন্দি করে রাখা হয়।  তাদের বাড়ি রংপুর মহানগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাহেবগঞ্জ বধূকমলা গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আব্দুর রশীদের বড় ছেলে দুখল মিয়া প্রায় ১২ বছর আগে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজের জন্য যান। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর অসুস্থ হলে বাড়িতে চলে আসেন। এর পর মানসিক রোগ দেখা দিলে পাগলামি শুরু হয় তার। প্রথমদিকে তার অসুস্থতা কারও জন্য ভয়ের কারণ না হলেও পরে উন্মাদ হয়ে যান দুখল মিয়া।
শরীরে কোনো কাপড় পড়েন না, সব সময় উলঙ্গ থাকেন। গ্রামের লোকজনের ওপর চড়াও হন। যাকে সামনে পান তাকেই মারধর করতেন। ফলে পরিবারের লোকজন প্রায় ৮ বছর থেকে তাকে একটি ঘরে শিকলে বেঁধে রেখেছেন। কেউ কাছে যেতে পারেন না। দূর থেকে তাকে খাবার দেয়া হয়। মলমূত্র ঘরেই ত্যাগ করেন। সারা শরীর কাদামাটিতে মাখা থাকে।

এদিকে, ছেলে বদ্ধ উন্মাদ হওয়ার কিছুদিন পরে মা দুলালী বেগমেরও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাকেও প্রায় ৭ বছর ধরে পৃথক আরেকটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। ঘরেই খাওয়া দাওয়া, মলমূত্র ঘরেই ত্যাগ করেন দুলালী।

কথা হয় অটোচালক আব্দুর রশীদের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মা-ছেলের চিকিৎসার জন্য যেটুকু আবাদি জমি ছিল সব বিক্রি করেছি। অনেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছি কিন্তু তারা সুস্থ হয়নি। মা-ছেলের চিকিৎসা করাতে করাতে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। ভিটাবাড়ি ছাড়া বিক্রি করার মতো এখন কিছুই নেই। অটো চালিয়ে কোনো রকমে পেট চালাচ্ছি। স্ত্রী-পুত্রের চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য এখন নেই। তাই স্ত্রীকে একটি ঘরে আর ছেলেকে অন্য ঘরে শিকলবন্দি করে রেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্য দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। ছোট ছেলেকে নিয়ে এই দুই রোগীকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।’

স্থানীয় জিয়ারুল হক, সেলিম মিয়া ও হারুন অর রশিদ জানান, পরিবারটি এক সময় সচ্ছল ছিল। কিন্তু একই পরিবারের দুজন পাগল হওয়াতে চিকিৎসা করাতে করাতে রশীদ মিয়া প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তারা মা-ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী,এমপি ও সিটি মেয়রসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে কথা হয় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মামুনার রশিদ মানিক মাস্টারের সাথে। তিনি বলেন,  ‘ওই পরিবারটির চিকিৎসায় সহায়তার জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। আবেদন পেলে সিটি মেয়রের মাধ্যমে তাদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা করা হবে।’ একই সাথে তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান।

এই পাতার আরো খবর