পাসপোর্ট থেকে ‘ইজরায়েল’ শব্দ বাদ দেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীরবতাকে ‘সরকারের নীতিহীন অবস্থান’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৪ মে) বিকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইসরায়েলী বিমানের মুহুর্মুহ হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে যখন ফিলিস্তিনের গাজা নগরী মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল ভ্রমণের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যা হতাশ করেছে গোটা বিশ্ববিবেককে।
আবার ২৩ মে ফিলিস্তিনবিরোধী ওই সিদ্ধান্তে ইজরায়েল সরকারের অভিনন্দন-টুইটের প্রেক্ষিতে তা অস্বীকার করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সরকারের পজিশন ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরবতা গোটা বিষয়ে সরকারের নীতিহীন অবস্থান বেরিয়ে এসেছে।
একইসঙ্গে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের বক্তব্যকে ‘তাৎপর্যময়’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই দুই রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধান। সংঘাতের মূল কেন্দ্র জেরুজালেম নগরে ‘আন্তসাম্প্রদায়িক লড়াই’ বন্ধ করার প্রতি জো-বাইডেনের উদাত্ত আহ্বান সংকট সমাধানে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মার্কিন গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকদের দৃঢ় সমর্থনের প্রতি সন্মান প্রদর্শনের সুস্পষ্ট বর্হিপ্রকাশ। বিএনপি ফিলিস্তিন-ইজরায়েল সংকট নিরসনে এই ধরনের সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন ও তার দেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।
আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং অসলো চুক্তির আলোকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানে ‘ইজরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা বাস্তবায়নের পথ সুগম করাই হচ্ছে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
চলমান হত্যাকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ায় আনার উদ্যোগসহ দুই রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জাতিসংঘের নেতৃত্বে অতিসত্ত্বর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফিলিস্তিন সংগ্রাম ও তাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করতেই বিকালে জরুরি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ওআইসি, জোট নিরপেক্ষ সম্মেলন-ন্যামসহ মুসলিম দেশসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার বিভিন্ন উদ্যোগ, পরবর্তিকালে দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকার পরিচালনা থেকে শুরু করে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি সেই একই নীতি ও অবস্থান অব্যাহত রাখার বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও মানবততার পক্ষের শক্তি হিসেবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিজয়ী হবার আগ পর্যন্ত আমরা সার্বিকভাবে তাদের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমাদের দল ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে যুদ্ধাহতদের জন্য ঔষধ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারের তরফ থেকে কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত ছিলো জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রী মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের তরফ থেকে প্রথমেই যে উদ্যোগটা গ্রহণ করা উচিত ছিলো যেটা হচ্ছে সরকার প্রধানের উদ্যোগ। এখন আপনারা বলেন যে, সরকার প্রধান যিনি, তিনি নাকি বিশ্বনেতা। তিনি তো উদ্যোগ নিতে পারতেন সমস্ত মুসলিম দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়ে যে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের পক্ষ দাঁড়াতে।
তিনি (সরকার প্রধান) তো সরকারের পক্ষে অনেক বড় রকমের সহযোগিতা পাঠাতে পারতেন, সাহায্য পাঠাতে পারতেন ফিলিস্তিনিদের কাছে। ঘটনা হচ্ছে হেজ বিন ডান এট ইয়েট।