বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া তার উচ্চবিত্ত নাগরিক এবং উচ্চমাত্রায় দূষণ সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বৃহৎ আকারে করের আওতায় নিয়ে আসার পদ্ধতি খুঁজছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্যই এমন সিদ্ধান্তের দিকে ঝুঁকছে দেশটি। খবর ব্লুমবার্গ।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। চলতি সপ্তাহে সংসদীয় কমিশনে প্রস্তাবটি পাস হলে এটি চলতি বছরে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি হবে। দেশটির সরকার ২০২৩ সালের মধ্যে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত রেখে তার ব্যয় বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা হিসেবে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত বছর দেশটির বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ পর্যন্ত।
ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী শ্রী মুলানি ইন্দ্রাবতী বলেন, কর পুনঃনির্ধারণ করার অর্থ শুধু রাজস্ব আয় বৃদ্ধিই নয়, বরং রাষ্ট্রের বাজেটে একটি স্থিতাবস্থা আনয়ন করাও। বিশ্বের প্রতিটি দেশই উচ্চমাত্রার বাজেট ঘাটতি ও ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে রাজস্ব আয় বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে এটি এমন সিদ্ধান্ত, যা বেশ সাবধানতার সঙ্গে নেয়া উচিত।
গতকাল বিনিয়োগকারীদের এক সভায় রাজস্ব নীতিমালা-বিষয়ক প্রধান ফেব্রিও কাকারিবু বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় বর্তমান সময়ের কর ব্যবস্থা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কর ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো হয়তো মাঝারি মেয়াদে কার্যকর করা হতে পারে।
এক ভিন্ন প্রতিবেদনে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক সিটিগ্রুপ ইনকরপোরেটেডের অর্থনীতিবিদ হেলমি আরমান বলেন, ইন্দোনেশিয়ার কর পরিকল্পনা পরিবারগুলোর ওপর বোঝা বৃদ্ধি করবে। পাশাপাশি এ পদক্ষেপ মুদ্রাস্ফীতির কারণও হতে পারে। জনগণের খরচের পরিমাণ আগের মতো বৃদ্ধি না পাওয়ার ফলে এ নীতি চলতি বছরের শেষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মুলানি ইন্দ্রাবতী জানান, কার্বন নিঃসরণের ওপর কর আরোপ করার ফলে ইন্দোনেশিয়া গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারবে। একই সঙ্গে সবুজি বিনিয়োগ ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্রমবর্ধমান তহবিলের জন্য এটি কাজে দেবে। সরকার চাইলে বর্তমানে প্রচলিত আবগারি, যান্ত্রিক গাড়ি এবং জ্বালানি তেলের ওপর আরোপিত করের থেকেও এসব ব্যয় মেটাতে পারে অথবা কার্বন কর নামে সম্পূর্ণ নতুন করের মাধ্যমে এসব ব্যয় মেটাতে পারে।
দেশটি এখন জীবাশ্ম জ্বালানি, যান্ত্রিক গাড়ি এবং কারখানা, কার্বননির্ভর পাল্প এবং কাগজ, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে কার্বন কর আরোপ করা হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া দেশটি বার্ষিক ৩ লাখ ৪৯ হাজার ডলারের বেশি আয়ের ব্যক্তিদের ওপর নতুন করে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর আরোপ করতে পারে। বর্তমানে আয়ের ওপর ৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর দেয়ার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়।
এছাড়া কয়েক স্তরের মূল্য সংযোজন কর প্রবর্তনের মাধ্যমেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির। বর্তমানে সব ধরনের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর আরোপিত রয়েছে। পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেনের ওপরও নতুন করে কর আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইন্দোনেশিয়া।
এসবের পাশাপাশি অপ্রদর্শিত সম্পদ ও আয় বৈধ করার সুযোগদানের মাধ্যমেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির। ফলে সরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিরা হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের মাধ্যমে তাদের সম্পদ বৈধ করে নিতে পারবেন।