ঢাকা ০৩:৩৯ এএম, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেতন-বৈষম্যের অবসান চান সরকারি চাকরিজীবীরা

সবুজবাংলা টিভি ডটকম-
  • প্রকাশকাল ১২:১০:৪৩ পিএম, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১ ২২১ পাঠক
সবুজবাংলা টিভি এর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করে বেতন-বৈষম্যের শিকার হচ্ছে ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীরা। ২০১৫ সালে প্রদত্ত পে স্কেলে বেতন দ্বিগুণ করার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ১-১০ গ্রেডের চাকরীজীবিদের সাথে ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীদের টাকার অঙ্কে বৈষম্য বেড়েছে। ২০১৫ সালের পে স্কেলে ১ থেকে ১০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা বিশাল অঙ্কে লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি বেতন-পদোন্নতি ও সামাজিক  মর্যাদায় ১ থেকে ১০ গ্রেডের চাকরীজীবীরা বরাবরই এগিয়ে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই পদে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতায় চাকরি নিয়ে সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করলে পদোন্নতিসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। আর সচিবালয়ের বাহিরে দফতর, অধিদফতরের দায়িত্ব পালন করলেও পদোন্নতি পাচ্ছে না ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা। ১-১০ গ্রেডে  চাকরিজীবীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পদোন্নতি পেলেও  ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা ১৫/২০ বছরে, অনেকে ব্লক পোস্টের কারনে সারা জীবনেও পদোন্নতি পাচ্ছে না। কেউ কেউ পদোন্নতি পেলেও গ্রেড ভিত্তিক বেতন বৈষম্যের কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। বেতন বৃদ্ধি আর পদোন্নতি না হওয়ার কারণে ১১-২০  গ্রেডের চাকরিজীবীদের মনে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বাঁধছে। একে-অপরের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। পদোন্নতি না পাওয়ার কারণে অনেক কর্মচারীরা কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছে।

আরও জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেলের মাধ্যমে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়। টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে ১০ বছর ও ১৬ বছর চাকুরীর ধারাবাহিকতায় যে উচ্চতর গ্রেড প্রদান করা হয়েছিল তাও আদালতে মামলাজনিত কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এ কারণে ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেল এখনও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয় নাই। এ জন্য ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা নিয়োগকৃত গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে বেতন পাওয়ার সকল সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা বরাবরই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বর্তমান বাজারে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি ও সেবা খাতের ব্যয় বাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাব পড়েছে আমাদের মত স্বল্প আয়ের কর্মচারীদের ওপরে। বেতন বৈষম্য নিরসনসহ ৮ দফা দাবি জানিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একাধিকবার স্মারক লিপি দিয়েছি। আসন্ন বাজেটে যাতে মহার্ঘ ভাতা প্রদান ও পরবর্তী সময়ে ৯ম পে স্কেল ঘোষণার মাধ্যমে বৈষম্য নিরসন করে আমাদের সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মানবতার নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা বিনীত আবেদন জানাই।

ফোরামের সহ-সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ৮২০০/- বেতন স্কেল হলে ৫ সদস্য পরিবারের প্রতিদিন মাথাপিছু ৫৪ টাকা পরে। এই ৫৪ টাকা দিয়ে একজন মানুষকে তিনবেলা ডাল ভাত খাওয়া কি সম্ভব?   পোশাকসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের কথা নাই বা বললাম। অথচ সরকারি উন্নয়ন এবং দেশকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার পিছনে ১১-২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের অবদান সবচেয়ে বেশি।  এমনকি বৈশ্বিক মহামারিতে নিজের জীবন বাজি রেখে ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা দিন-রাত রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকারি নির্দেশনা পালন করে যাচ্ছেন, নেই তাদের জন্য কোনও প্রণোদনাও।

ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ১ থেকে ১০ গ্রেডের ক্ষেত্রে  অপ্রয়োজনীয় গ্রেড বিন্যাসের মাধ্যমে স্বল্প ব্যবধান রাখায় ১১-২০ গ্রেডের সঙ্গে বেতন বৈষম্য তৈরি হয়েছে। গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে  ও বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সাথে প্রচলিত ভাতা সমূহ সমন্বয়ের মাধ্যমে বৈষম্য কমানোর আবেদন জানাই। সেই সাথে টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড প্রদান, সচিবালয়ের মত পদ-পদবি ও চাকরি অবসরত্তোর শতভাগ পেনশন প্রদানসহ অতি দ্রুত ১২-১৪ লক্ষ কর্মচারীদের প্রাণের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে কর্মে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধির জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বেতন-বৈষম্যের অবসান চান সরকারি চাকরিজীবীরা

প্রকাশকাল ১২:১০:৪৩ পিএম, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১

দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করে বেতন-বৈষম্যের শিকার হচ্ছে ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীরা। ২০১৫ সালে প্রদত্ত পে স্কেলে বেতন দ্বিগুণ করার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ১-১০ গ্রেডের চাকরীজীবিদের সাথে ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীদের টাকার অঙ্কে বৈষম্য বেড়েছে। ২০১৫ সালের পে স্কেলে ১ থেকে ১০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা বিশাল অঙ্কে লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি বেতন-পদোন্নতি ও সামাজিক  মর্যাদায় ১ থেকে ১০ গ্রেডের চাকরীজীবীরা বরাবরই এগিয়ে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই পদে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতায় চাকরি নিয়ে সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করলে পদোন্নতিসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। আর সচিবালয়ের বাহিরে দফতর, অধিদফতরের দায়িত্ব পালন করলেও পদোন্নতি পাচ্ছে না ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা। ১-১০ গ্রেডে  চাকরিজীবীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পদোন্নতি পেলেও  ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা ১৫/২০ বছরে, অনেকে ব্লক পোস্টের কারনে সারা জীবনেও পদোন্নতি পাচ্ছে না। কেউ কেউ পদোন্নতি পেলেও গ্রেড ভিত্তিক বেতন বৈষম্যের কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। বেতন বৃদ্ধি আর পদোন্নতি না হওয়ার কারণে ১১-২০  গ্রেডের চাকরিজীবীদের মনে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বাঁধছে। একে-অপরের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। পদোন্নতি না পাওয়ার কারণে অনেক কর্মচারীরা কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছে।

আরও জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেলের মাধ্যমে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়। টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে ১০ বছর ও ১৬ বছর চাকুরীর ধারাবাহিকতায় যে উচ্চতর গ্রেড প্রদান করা হয়েছিল তাও আদালতে মামলাজনিত কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এ কারণে ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেল এখনও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয় নাই। এ জন্য ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা নিয়োগকৃত গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে বেতন পাওয়ার সকল সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা বরাবরই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বর্তমান বাজারে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি ও সেবা খাতের ব্যয় বাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাব পড়েছে আমাদের মত স্বল্প আয়ের কর্মচারীদের ওপরে। বেতন বৈষম্য নিরসনসহ ৮ দফা দাবি জানিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একাধিকবার স্মারক লিপি দিয়েছি। আসন্ন বাজেটে যাতে মহার্ঘ ভাতা প্রদান ও পরবর্তী সময়ে ৯ম পে স্কেল ঘোষণার মাধ্যমে বৈষম্য নিরসন করে আমাদের সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মানবতার নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা বিনীত আবেদন জানাই।

ফোরামের সহ-সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ৮২০০/- বেতন স্কেল হলে ৫ সদস্য পরিবারের প্রতিদিন মাথাপিছু ৫৪ টাকা পরে। এই ৫৪ টাকা দিয়ে একজন মানুষকে তিনবেলা ডাল ভাত খাওয়া কি সম্ভব?   পোশাকসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের কথা নাই বা বললাম। অথচ সরকারি উন্নয়ন এবং দেশকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার পিছনে ১১-২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের অবদান সবচেয়ে বেশি।  এমনকি বৈশ্বিক মহামারিতে নিজের জীবন বাজি রেখে ১১-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীরা দিন-রাত রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকারি নির্দেশনা পালন করে যাচ্ছেন, নেই তাদের জন্য কোনও প্রণোদনাও।

ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ১ থেকে ১০ গ্রেডের ক্ষেত্রে  অপ্রয়োজনীয় গ্রেড বিন্যাসের মাধ্যমে স্বল্প ব্যবধান রাখায় ১১-২০ গ্রেডের সঙ্গে বেতন বৈষম্য তৈরি হয়েছে। গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে  ও বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সাথে প্রচলিত ভাতা সমূহ সমন্বয়ের মাধ্যমে বৈষম্য কমানোর আবেদন জানাই। সেই সাথে টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড প্রদান, সচিবালয়ের মত পদ-পদবি ও চাকরি অবসরত্তোর শতভাগ পেনশন প্রদানসহ অতি দ্রুত ১২-১৪ লক্ষ কর্মচারীদের প্রাণের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে কর্মে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধির জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।