ডা. সাবেরা হত্যা: বিলম্বিত মামলায় সব আসামি অজ্ঞাতনামা
- প্রকাশকাল ০৫:২৮:৩৬ এএম, বুধবার, ২ জুন ২০২১ ২১০ পাঠক
রাজধানীর কলাবাগানের একটি ফ্ল্যাটে ধানমন্ডির গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক কাজী সাবেরা রহমান (৪৭) হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুন) রাত ১১টার দিকে কলাবাগান থানায় ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় ভিকটিমের ভাই রেজাউল হাসান দুলাল এ মামলা দায়ের করেন।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র ঠাকুর মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘ভিকটিমের মামতো ভাই রেজাউল হাসান মামলাটি দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ঘটনাটি তদন্তাধীন।’
এর আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে ৫ জনকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) নিয়ে গেছে, তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মঙ্গলবার রাতে সাবেরার বড় ভাই মামলার বাদী রেজাউল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ (১ জুন) সন্ধ্যায় সাবেরার মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করেছি। মামলার বাদী কে হবেন এটা নিয়ে আমরা একটু দ্বিধায় ছিলাম। সাবেরার মা অসুস্থ। তার মেয়েটাও ছোট। ছেলে এখনও ইমম্যাচিউর্ড এবং তার বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তাই আমিই মামলাটি করলাম।’
গত সোমবার (৩১ মে) দুপুরে রাজধানীর কলাবাগানের ৫০/১ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ডা. সাবেরার মরদেহ উদ্ধার করে কলাবাগান থানা পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রবিবার (২৯ মে) রাতের কোনও এক সময় সাবেরাকে হত্যা করা হয়। তাকে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। হত্যাকাণ্ডের আরও আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।
ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক শেখ রাসেল গণমাধ্যমকে জানান, সাবেরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে পোড়া ক্ষত রয়েছে। রবিবার রাতে কোনও এক সময় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ বলছে, ডা. সাবেরাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা। তার লাশ পুড়িয়ে ফেলতে তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। সাবেরার লাশের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা নিশ্চিত হতে ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা আলামত সংগ্রহ করছেন। শিগগিরই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হবে বলে আশা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
প্রথম স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর শামসুদ্দীন আজাদের সঙ্গে ডা. সাবেরার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সাবেরার প্রথম স্বামীও চিকিৎসক ছিলেন। সাবেরার দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলে আগের স্বামীর ঘরের।
সাবেরার মামাতো ভাই রেজাউল হাসান দুলাল জানিয়েছেন, সাবেরার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বড় ও মেয়ে ছোট। ছেলে বিবিএ পড়ে, মেয়ের বয়স ১০ বছর। সাবেরার স্বামী শামসুদ্দীন আজাদ এখানে থাকেন না। মনোমালিন্যের কারণে গত এক বছর ধরে আজাদ ও সাবেরা আলাদা থাকেন। তবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল এবং সম্পর্কও ভালো ছিল।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম গ্যাসের সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়েছে। পরে এসে দেখি মরদেহ উপুড় হয়ে পড়ে আছে। ঘাড়ে ও পিঠে ক্ষতচিহ্ন। এ হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
সাবেরার খালাতো বোন জাকিয়া খন্দকার মমি বলেন, ‘আজকে (সোমবার) সাবিরার অফিস ছিল এবং বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। মেয়ে গতকাল (রবিবার) নানুর বাসায় গিয়েছিল। ছেলে নানুর বাসায় থাকে। আমার মনে হয় আশপাশের কেউ শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করেছে।’
ডা. সাবেরার স্বামী শামসুদ্দীন আজাদ বলেন, ‘আমি বেলা ১১টার দিকে খবর পেয়ে এখানে আসি। পুলিশ প্রথমে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। পরে ভেতরে ঢুকে দেখি রক্তাক্ত লাশ। আমি কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না। পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
সাবেরার কর্মস্থল গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর অমলা বিশ্বাস বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে তিনি (সাবেরা) খুব ভালো মানুষ ছিলেন। উনি আমাদের সঙ্গে ডাক্তার হিসেবে নয়, বন্ধুর মতো মিশতেন। খুব মিশুক ছিলেন। ছোটবড় সবাইকে খুব ভালোবাসতেন।’
কলাবাগানের ৫০/১ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে সাবেরা নিজের কক্ষে একাই থাকতেন। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানায়, সাবেরার পিঠে ও গলায় জখমের চিহ্ন দেখা গেছে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লাশ উদ্ধারের পরপরই বাসার সাবলেটের বাসিন্দা কানিজ সুবর্ণা, তার এক বন্ধু ও বাসার দারোয়ান রমজানকে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়।















