ঢাকা ০২:৫২ এএম, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টিতে ঝুঁকি বাড়ছে পাহাড়ে, প্রস্তুত আশ্রয় কেন্দ্র

সবুজবাংলা টিভি ডটকম-
  • প্রকাশকাল ১০:৪৯:৩৪ এএম, সোমবার, ৭ জুন ২০২১ ২১৬ পাঠক
সবুজবাংলা টিভি এর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বাড়ছে রাঙামাটিতে। নানা শঙ্কার মধ্যে পাহাড়ে বসবাস করছে হাজারো পরিবার। এরই মধ্যে টানা হাল্কা, মাঝারি  ও ভারী বৃষ্টিপাতে ছোট ছোট পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে এ জেলায়। পাহাড়ে গা থেকে আছড়ে পড়ছে পাথুরে মাটি। এতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মাঝে ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুণ। উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসনও। কিন্তু তবুও পাহাড় ছাড়তে নারাজ অনেকেই।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলছেন, পাহাড়ে বসবাসরতদের নিরাপত্তায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রাঙামাটি পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। পাহাড়ি বাসিন্দাদের সতর্ক করতে অব্যাহত আছে মাইকিংও। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সভা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ৩১টি স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া পাহাড়ধসের ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ শুরু করেছি। পাহাড় ধসে প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন মহলের সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে।

রাঙামাটি পৌরসভার তথ্য মতে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকায় এক লাখ ২৫ হাজারের অধিক মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হচ্ছে-শহরের শিমুলতলী, নতুন পাড়া, মনতলা, রাঙ্গাপানি, রিজার্ভ, এসপি অফিস সংলগ্ন এলাকা, শহীদ আবদুুল আলী একাডেমি সংলগ্ন ঢাল, পুলিশ লাইন সংলগ্ন ঢাল, স্বর্ণটিলা পাহাড়ের ঢাল, রাজমণিপাড়া পাহাড়ের ঢাল, রেডিও স্টেশনের পাশে শিমুলতলী পাহাড়ের ঢাল, লোকনাথ মন্দির পাহাড়ের ঢাল, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, চম্পক নগর পাহাড়ের ঢাল, পাবলিক হেলথ পাহাড়ের ঢাল, আমানতবাগ পাহাড়ের ঢাল, মুজিবনগর পাহাড়ের ঢাল এলাকায়। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধস দেখা দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীরা আতঙ্কে ভুগছেন। টানা বর্ষণে শহর এলাকাসহ গোটা জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন। তাই আতঙ্কগ্রস্ত অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন।

রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, এখনো বর্ষা আসেনি। তবে শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টিপাত। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে পাহাড় ধসের ঘটনা। তাই যারা এখনো পাহাড়ের নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা নিজেদের ঝুঁকি নিজেরাই তৈরি করছে।

এদিকে, কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় থেকে মাটি ধসে সড়কের ওপর পড়ছে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আবারও পাহাড় ধসের বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। তাই রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূণ এলাকা পরিদর্শন করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক।

রাঙামাটি জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবির জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বাতাসের মিশ্রণের ফলে বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানীর ঘটনাটি ঘটেছে ১৯৯৭-২০১১ সালের জুন মাসে। ওই সময় পাহাড় ধসে শহরের রিজার্ভমুখ এলাকায় শিশু, নারীসহ একই পরিবারের ৮ জনের প্রাণহানী ঘটে। এপরও রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বড় ধরনের জানমালে ক্ষয়ক্ষতি হয় ২০১৭ সালে ১৩ জুন। সে সময় পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২০ জন।

জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়া-রাঙামাটির ১০টি উপজেলা মিলে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। তার মধ্যে সম্পন্ন বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি হচ্ছে এক হাজার ২৩১টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-বন, বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা, মৎস্য খামার, গবাদি পশু. হাঁস মুরগি। এছাড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। যার পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৯.৩১ হেক্টর। এছাড়া শহর এলকায় ১৪৫টি স্থানে পাহাড় ধসে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন সড়ক। দেশের সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাঙামাটি। মাটির নিচে বিলীন হয়ে যায় ১৭টি পরিবার।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বৃষ্টিতে ঝুঁকি বাড়ছে পাহাড়ে, প্রস্তুত আশ্রয় কেন্দ্র

প্রকাশকাল ১০:৪৯:৩৪ এএম, সোমবার, ৭ জুন ২০২১

সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বাড়ছে রাঙামাটিতে। নানা শঙ্কার মধ্যে পাহাড়ে বসবাস করছে হাজারো পরিবার। এরই মধ্যে টানা হাল্কা, মাঝারি  ও ভারী বৃষ্টিপাতে ছোট ছোট পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে এ জেলায়। পাহাড়ে গা থেকে আছড়ে পড়ছে পাথুরে মাটি। এতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মাঝে ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুণ। উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসনও। কিন্তু তবুও পাহাড় ছাড়তে নারাজ অনেকেই।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলছেন, পাহাড়ে বসবাসরতদের নিরাপত্তায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রাঙামাটি পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। পাহাড়ি বাসিন্দাদের সতর্ক করতে অব্যাহত আছে মাইকিংও। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সভা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ৩১টি স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া পাহাড়ধসের ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় রেখে আমরা কাজ শুরু করেছি। পাহাড় ধসে প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিভিন্ন মহলের সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে।

রাঙামাটি পৌরসভার তথ্য মতে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকায় এক লাখ ২৫ হাজারের অধিক মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হচ্ছে-শহরের শিমুলতলী, নতুন পাড়া, মনতলা, রাঙ্গাপানি, রিজার্ভ, এসপি অফিস সংলগ্ন এলাকা, শহীদ আবদুুল আলী একাডেমি সংলগ্ন ঢাল, পুলিশ লাইন সংলগ্ন ঢাল, স্বর্ণটিলা পাহাড়ের ঢাল, রাজমণিপাড়া পাহাড়ের ঢাল, রেডিও স্টেশনের পাশে শিমুলতলী পাহাড়ের ঢাল, লোকনাথ মন্দির পাহাড়ের ঢাল, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, চম্পক নগর পাহাড়ের ঢাল, পাবলিক হেলথ পাহাড়ের ঢাল, আমানতবাগ পাহাড়ের ঢাল, মুজিবনগর পাহাড়ের ঢাল এলাকায়। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধস দেখা দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীরা আতঙ্কে ভুগছেন। টানা বর্ষণে শহর এলাকাসহ গোটা জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন। তাই আতঙ্কগ্রস্ত অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন।

রাঙামাটি পৌর মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, এখনো বর্ষা আসেনি। তবে শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টিপাত। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে পাহাড় ধসের ঘটনা। তাই যারা এখনো পাহাড়ের নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা নিজেদের ঝুঁকি নিজেরাই তৈরি করছে।

এদিকে, কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় থেকে মাটি ধসে সড়কের ওপর পড়ছে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আবারও পাহাড় ধসের বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। তাই রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূণ এলাকা পরিদর্শন করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক।

রাঙামাটি জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবির জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বাতাসের মিশ্রণের ফলে বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানীর ঘটনাটি ঘটেছে ১৯৯৭-২০১১ সালের জুন মাসে। ওই সময় পাহাড় ধসে শহরের রিজার্ভমুখ এলাকায় শিশু, নারীসহ একই পরিবারের ৮ জনের প্রাণহানী ঘটে। এপরও রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বড় ধরনের জানমালে ক্ষয়ক্ষতি হয় ২০১৭ সালে ১৩ জুন। সে সময় পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণ হারায় ১২০ জন।

জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়া-রাঙামাটির ১০টি উপজেলা মিলে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। তার মধ্যে সম্পন্ন বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি হচ্ছে এক হাজার ২৩১টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-বন, বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা, মৎস্য খামার, গবাদি পশু. হাঁস মুরগি। এছাড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। যার পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৯.৩১ হেক্টর। এছাড়া শহর এলকায় ১৪৫টি স্থানে পাহাড় ধসে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিভিন্ন সড়ক। দেশের সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাঙামাটি। মাটির নিচে বিলীন হয়ে যায় ১৭টি পরিবার।