বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে ছাত্রদলের তোপের মুখে পড়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, আমার মতো লোকদের ভয় দেখিয়ে কণ্ঠরোধ করা যায় না।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘শিক্ষায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি: করোনাকালীন শিক্ষা ব্যবস্থা ২০২১-২০২২’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ডা. জাফরুল্লাহ বক্তব্য দেওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এদেশে অনেকে, যেমন এখানে আমাদের সেলিম ভুঁইয়া (শিক্ষক নেতা) বলেছেন, এই জায়গায় বিএনপি আসলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হবে? হবে না। কারণ বিএনপির তো আসারই ইচ্ছা নাই। বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে হবে-এই জাতীয় একটা ইচ্ছা থাকতে হবে ও আগ্রহ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে আল্লাহর ওহি দিয়া। সেই ওহি লন্ডন থেকে ভেসে আসে ইনারা একেকজন।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে আমি মনে করি, এই গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারকে পতন ঘটাতে হলে যেটা শওকত মাহমুদ বলেছেন, ‘সবাইকে একত্রিত হতে হবে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হতে হবে বিএনপির ঘরে, নিজের ঘরে।’
খালেদা জিয়ার মধ্যে ডিপপ্রেরেশন ‘দেখা দিয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেউ খালেদা জিয়ার চেহারা লক্ষ্য করে দেখেছেন। আপনারা যদি তার চোখ দুইটার দিকে দেখেন-ডিপপ্রেরেশনের ভাব, এই ডিপপ্রেরেশন হল আলজহাইমারের পূর্ব লক্ষণ।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তারা (সরকার) যেভাবে উনাকে জীবিত থেকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এটা বিএনপির লোকেরা হয়ত উপলব্ধিই করে না।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘তারা (বিএনপি) যদি উনার মুক্তি চায়, আমি বারে বারে বলেছি, তারেক (তারেক রহমান) দুই বছর চুপচাপ বসে থাকো। পারো তো বিলাতে লেখাপড়াতে যুক্ত হয়ে যাও। সেখানে বহুভাবে লেখাপড়া করা যায়।’
এই সময়ে দর্শক সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ওমর ফারুক কাউসার প্রতিবাদ জানিয়ে, সালাম দিয়ে বলেন, ‘স্যার আপনি বিএনপির কে? আপনি সবসময় বিএনপিকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলেন।’
জবাবে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি বিএনপির কিছু না। ওই যে গণতন্ত্রে আমার কথা বলার অধিকার আছে। আমার কথাটা শুইনা তারপরে বলেন। আপনাদের ভালোর জন্য কইতাছি। আপনাদের ভালোই বুঝেন না আপনারা।’
এই পর্যায়ে কাউসার আবার বলেন, ‘না, আমরা আমাদের ভালো অবশ্যই বুঝি। আপনি উল্টা বুঝেন। আপনি আমাদের নেতাকে নিয়ে কথা বলবেন না, কখনই বলবেন না। আপনি সব সময় আমাদের নেতা নিয়ে কথা বলেন।’
তিনি বলেন, ‘যদি বলেন, পরবর্তিতে কিছু হলে কিন্তু আমরা দায়ি না। ধন্যবাদ। আপনি জয়কে (সজীব ওয়াজেদ) নিয়ে বলেন, তাকে নিয়ে তো কিছু বলেন না, সিনিয়রদের নিয়ে বলেন।’
এই বলে ছাত্রদল কর্মীরা আলোচনা স্থল থেকে বেরিয়ে যান।
ভয় দেখিয়ে কণ্ঠরোধ করা যায় না
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা দায়ি হবেন কেন? মানুষ যখন ধর্মান্ধ হয়ে যায় তখন যে সমস্যা হয় এই ঘটনা তার প্রমাণ। আমার মতো লোকদের ভয় দেখিয়ে কণ্ঠরোধ করা যায় না। আমার কাছে যেটা ভালো সেটা বলেই যাবো, তাতে কারো পছন্দ হোক বা না হোক।’
জাইমাকে আনতে হবে
ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বিএনপিকে জাগতে হলে আমি মনে করি জাইমাকে এদেশে আসতে হবে। জাইমা যদি আসে তরুণ আছে। তারা সবাইকে নিয়ে এখানে আছেন।
তিনি বলেন, নতুবা বাইরে থেকে হুকুমনামা দিয়ে হবে না। আজকে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। আজকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য আমাদের সবাইকে এক কাতারে নেমে আন্দোলনে আসতে হবে, অগণতান্ত্রিক সরকার গেলে, অনির্বাচিত সরকার গেলে তাহলে পরিবর্তন হবে।’
এক ব্যক্তির বন্দনা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তির বন্ধনা। দেখেন, ওখানে তারা (ক্ষমতাসীন) করছে এক ব্যক্তির বন্ধনা। এই কিছুক্ষণ আগে এখানেও দেখলেন এক ব্যক্তির বন্ধনা। এক ব্যক্তির বন্ধনা জাতিকে ধ্বংস পথে নিয়ে যায়।
এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আনম এহছানুল হক মিলন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও মোশাররফ আহমেদ ঠাকুরের সঞ্চালনায় সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সেনা বাহিনীর সাবেক ঊধর্বতন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামসহ পেশাজীবী নেতারা বক্তব্য দেন।