আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে ২০২০ সালের মে মাসে মিনেয়াপোলিস শহরে হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ সাবেক একজন পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনকে ২২ বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ জুন) এই দণ্ড ঘোষণা করেন বিচারক। খবর বিবিসি বাংলার
এসময় বিচারক বলেন, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অপব্যবহার এবং বিশ্বাসভঙ্গ করার পাশাপাশি যে নিষ্ঠুরতা ডেরেক শভিন দেখিয়েছেন সে কারণে তাকে এই সাজা ভোগ করতে হবে।
গ্রেফতারের সময় ৪৮ বছর বয়সী ফ্লয়েডের গলার ওপর মিনিটের বেশি সময় হাঁটু গেড়ে বসে থাকার কারণে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। তার এই হত্যাকাণ্ডের ফলে সারা বিশ্বে বর্ণবাদ এবং পুলিশি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
৪৫ বছর বয়সী শভিন গত মাসে সেকেন্ড ডিগ্রি হত্যাকাণ্ড এবং আরও কয়েকটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। বিচার চলার সময় তার আইনজীবী দাবি করেছিলেন, এই হত্যার ঘটনাটি আসলে ‘সরল বিশ্বাসে করা একটি ভুল’।
সাজার রায়ে ডেরেক শভিনকে প্রিডেটরি অফেন্ডার হিসাবে তালিকাভুক্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নজরদারি করে থাকে। সেই সঙ্গে শভিনকে আজীবনের জন্য অস্ত্রের মালিক হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরও তিনজন সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আলাদাভাবে জর্জ ফ্লয়েডের সাধারণ নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফ্লয়েডের পরিবার এবং তাদের সমর্থকরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
আইনজীবী বেন ক্রাম্প একটি টুইট বার্তায় বলেছেন, এই ঐতিহাসিক সাজার মাধ্যমে পরিণতি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ফ্লয়েড পরিবার এবং আমাদের জাতিকে আরও (ওই ঘটনার) নিরাময়ের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।
ফ্লয়েডের বোন ব্রিজেট ফ্লয়েড বলেছেন, এই কারাদণ্ড পুলিশের নিষ্ঠুরতার অভিযোগ যে শেষ পর্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়ে থাকে- সেটাই প্রমাণ করলো। তবে এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘সাজাটি সঠিক বলেই মনে হচ্ছে।’ যদিও স্বীকার করেছেন যে, তিনি বিস্তারিত সব কিছু জানেন না।
আদালতে যখন সাজার শুনানি চলছিল, তখন ফ্লয়েডের ভাই টেরেন্স ফ্লয়েড সর্বোচ্চ সাজা, ৪০ বছরের কারাদণ্ডের দাবি করেছিলেন।
টেরেন্স ফ্লয়েড এসময় বলেন, কেন? তখন আপনি কি ভাবছিলেন? আপনার পা দিয়ে যখন আমার ভাইয়ের গলা চেপে ধরেছিলেন, তখন আপনার মাথার মধ্যে কি কাজ করছিল?।
বিচারক বলেছেন, এই মামলাটি পুরো সম্প্রদায় এবং দেশের জন্য কষ্টদায়ক, কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্টের ফ্লয়েডের পরিবারের জন্য। আবেগ বা সহানুভূতির ওপর নির্ভর করে এই সাজা দেয়া হয়নি। কিন্তু আমি এটাও বলতে চাই, যে গভীর ও অবর্ণনীয় বেদনা সব পরিবারগুলো অনুভব করছে, বিশেষ করে ফ্লয়েডের পরিবার, আমি সেটা অনুভব করতে পারছি।
গত বছর মে মাসে জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ফ্লয়েডের (৪৮) ঘাড়ে শভিনের (৪৫) হাঁটু গেড়ে বসে থাকার ৯ মিনিটের ভিডিও সাড়া বিশ্বে সমালোচনার ঝড় তোলে।
সেসময় ফ্লয়েড বারবার আকুতি জানিয়ে বলছিলেন, তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। কিন্তু তাতে মন গলেনি ঘাড়ে চেপে বসা পুলিশ কর্মকর্তার।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বর্ণবাদ ও পুলিশি বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে শুরু হয় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।