বর্ষা মৌসুমের টানা দুইদিনের বৃষ্টিতেই ভূমিহীনদের উপহার দেওয়া বাড়ির একপাশের মাটি খালে ধসে গেছে। এতে করে বেশকয়েকটি ঘর ভেঙে পড়েছে। ফলে সুবিধাভোগীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। তাই প্রকল্পের বাকি ঘরগুলো ঠিক থাকলেও এসব ঘরে কেউই থাকছেন না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তড়িঘড়ি করে খালের কিনারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সেই খাল থেকেই মাটি কেটে বাড়ির চারপাশে মাটি দেওয়া হয়। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি খালে ধসে যাওয়ায় ঘরগুলোর এই হাল হয়েছে। এ যেন সরকারি মাল, দরিয়ামে ঢাল। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শিতার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে মনে করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় অতিদরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য সরকারিভাবে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে মোতাবেক এই উপজেলায় দুই কোটি পঁচাশি লাখ পঁচিশ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে দুই শতক করে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে অতিদরিদ্র ১৬৩টি ভূমিহীন পরিবারকে একটি করে আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। দুই কক্ষ, রান্না ঘর ও টয়লেটসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রত্যেকটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা।
এরই ধারাবাহিকতায় খানপুর ইউনিয়নের খানপুর বুড়িগাড়ি নামক স্থানে খালের কিনারায় আটত্রিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয়ে বাইশটি ভূমিহীন পরিবার পুর্নবাসনের জন্য বাইশটি আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীতে সুফলভোগীদের হাতে এসব বাড়ির জমির দলিল ও বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এসব নতুন বাড়িতে ওঠার আগেই ঘটছে নানা বিপত্তি। এমনকি বিগত তিন-চারদিন আগে বর্ষা মৌসুমের টানা দুইদিনের বৃষ্টিতেই দুর্যোগ সহনীয় সাতটি ঘর ভেঙে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার খানপুর বুড়িগাড়ি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ির পেছন পাশের মাটি খালে ধসে পড়েছে। এতে করে সুবিধাভোগী হায়দার আলী, আব্দুল কাদের, বাদশা মিয়া, শেফালী বেগম, নদীয়ার চাঁদ, মোকছেদ আলী, সোনা উদ্দিন ও গোলাপী বেগমের ঘরগুলো ভেঙে পড়েছে।
খালটিতে বাঁশের পাইলিং করে প্রকল্পের বাড়িগুলো রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু বারবার মাটি ধসে খালে পড়ায় ভেঙে পড়া ঘরগুলো পুর্ননির্মাণ কাজ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সুবিধাভোগী অতি দরিদ্র ভূমিহীনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ, বাদশা মিয়াসহ একাধিক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে কোনো সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ভেঙে পড়তে পারে। কারণ খালটির কূল ঘেষে এসব ঘর বানানো হয়েছে। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই একপাশের মাটি ধসে ঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছে। তাই ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন তারা।
তাছাড়া শুধু বর্ষার বৃষ্টিতে ঘর ভেঙে পড়াই নয়, বাড়িটি হস্তান্তর করা হলেও এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। সেইসঙ্গে রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাইশটি পরিবারের জন্য মাত্র একটি হস্তচালিত নলকূপ চালু রয়েছে। সবমিলিয়ে এখানে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ। তাই প্রকল্পের বাকি পনেরটি ঘর ঠিক থাকলেও এসব ঘরে কেউই থাকছেন না বলে জানান তারা।
সুফলভোগী শেফালী বেগম বলেন, আমাদের মতো ভূমিহীনদের একটি করে বাড়ি উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু নতুন বাড়িতে উঠতে পারছি না। বসবাস শুরুর আগেই তার বাড়ির একটি ঘর ছাড়া সবই ভেঙে পড়েছে। বাকি ঘরটির দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। এটিও যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই এখন কী-করব তা ভেবে পাচ্ছি না।
খানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঞ্জু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, খালের ধারে বাঁশের পাইলিং দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে মাটি ধসে যেতে না পারে। তাছাড়া ভেঙে পড়া কয়েকটি টয়লেট ও রান্না ঘর পুর্ননির্মাণ করা হচ্ছে। তাই তেমন কোনো সমস্যা নেই। সুবিধাভোগী অনেকেই এখন ওইসব নতুন ঘরে বসবাস শুরু করেছেন। বাকিরাও দ্রুততম সময়ের মধ্যেই উঠবেন বলে জানান তিনি।
শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় (করোনায় আক্রান্ত) তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের দু’পাশের ঘরগুলো সব ঠিক আছে। কিন্তু মাঝখানে মাটি ধসে যাওয়ায় চার পাঁচটি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিষয়টি জানার পরপরই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। সেইসঙ্গে ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে জানানো হয়েছে।