অবৈধ পথে কেউ যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করলে তাকে দূরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পাঠানোর একটি আইন করতে যাচ্ছে দেশটির রক্ষণশীল সরকার।
আগামী সপ্তাহে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ন্যাশনালিটি অ্যান্ড বর্ডারস বিল’ (জাতীয়তা ও সীমান্ত আইন) নামের নতুন আইন উত্থাপন করবেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল।
ডয়চেভেলে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আইনের একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটিতে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যের ভূখণ্ডের বাইরে কেন্দ্র খোলা হবে। অনিয়মিত পথে কেউ যুক্তরাজ্যে আসলে তাকে পাঠানো হবে দ্বীপে।
প্রস্তাবিত দ্বীপগুলোর মধ্যে রয়েছে- দক্ষিণ আটলান্টিক সমুদ্রের অ্যাসসেনশন, জিব্রাল্টার ও আইল অব ম্যান।
চলতি বছর বিপুলসংখ্যক অভিবাসী অনিয়মিত পথে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে এসেছেন। সংখ্যাটি পাঁচ হাজার ৬০০ জন ছাড়িয়েছে।
অনিয়মিত অভিবাসীদের এই স্রোত ঠেকাতে গত মার্চেই প্রাথমিক পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করে যুক্তরাজ্য সরকার।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতে প্রায় একই ধরনের একটি আইন পাস করেছে ডেনমার্কও। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশটিতে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে আফ্রিকাতে তৃতীয় কোনো দেশে। এজন্য ডেনিশ সরকার রুয়ান্ডার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিও করেছে।
এছাড়াও তিউনিসিয়া, ইথিওপিয়া, মিসর ও ইরিত্রিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম।
যুক্তরাজ্য তাদের প্রস্তাবিত আইন নিয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম টাইমস। আফ্রিকায় দুই দেশই যাতে একটি আবেদন প্রক্রিয়া কেন্দ্র ভাগাভাগি করতে পারে, সেই সম্ভাবনা নিয়ে ডেনিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রীতি প্যাটেল আলাপ করেছেন।
যেকোনো উপায়ে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম ঠেকাতে বদ্ধ পরিকর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। তাই সরকার এমন একটি ব্যবস্থা করতে চায়, যার মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে যুক্তরাজ্যে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে আর আকর্ষণীয় থাকবে না।
অবশ্য ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনাটি এনজিও ও অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর প্রবল বিরোধিতায় পড়েছে।
যুক্তরাজ্যের রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান এনভার সলোমোন একে ‘ঝুঁকিতে থাকার মানুষদের প্রতি নিষ্ঠুর ও নির্মম শত্রুতা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিরোধী দল লেবার পার্টিও প্রস্তাবিত আইন নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, তারা এর বিপক্ষে ভোট দেবে।
লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের একজন মুখপাত্র প্রস্তাবটিকে ‘ভয়াবহ ও অমানবিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র মুখপাত্র ম্যাথিও সাল্টমার্শ বলেছেন, এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্য মূলত সমস্যার ভার আরেকজনের কাঁধে চাপাচ্ছে।