বায়েজিদ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান জানান, গত ২৮ জুন রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোডে ট্রাকের চাপায় এক নারীর মৃত্যুর পর আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ হিসেবে তার লাশ দাফন করে। শনিবার পুলিশ নিশ্চিত হয়, নিহত ওই নারী ছিলেন মিনু আক্তার।
ত্রিশোর্ধ মিনুর বাড়ি কুমিল্লার ময়নামতি এলাকায়। স্বামী ঠেলাগাড়ি চালক বাবুল বছর পাঁচেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় থাকছিলেন মিনু।
সন্তানদের খাওয়া-দাওয়া এবং আর্থিক কিছু সহায়তার প্রতিশ্রুতিতে কুলসুমা আক্তার নামের এক নারীর কাছ থেকে বদলি জেল খাটার প্রস্তাব পেয়ে তিনি রাজি হন।
২০০৬ সালে চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে এক নারীকে হত্যার দায়ে ২০১৭ সালে কুলসুমা আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। রায়ের সময় তিনি ছিলেন পলাতক।
পরে ২০১৮ সালের জুনে কুলসুমা আক্তার ‘সেজে’ মিনু আক্তার ‘স্বেচ্ছায়’ আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রায় তিন বছর কারাগারে থাকার পর চলতি বছরের ১৮ মার্চ কারা কর্তৃপক্ষকে মিনু আক্তার জানান, তিনি কোনো মামলার আসামি নন। তার নাম কুলসুমাও নয়। সন্তানদের ভরণ-পোষণের আশ্বাস পেয়ে তিনি আরেকজনের বদলে জেল খাটতে রাজি হয়েছেন।
কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ গত মার্চে মামলার নথিপত্র উচ্চ আদালতে পাঠান বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু আক্তার।
তিনি জেলে যাওয়ার পর তার দুই ছেলে ইয়াছিন ও গোলাপ ছলিমপুরের একটি মাদ্রাসায় ছিল। আর সবার ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে লালন পালন করতেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। গত এপ্রিলে রোজার মধ্যে মেয়েটির মৃত্যু হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর মেয়ের মৃত্যুর খবর পান মিনু।
তার ভাই রুবেল হোসেন জানান, মুক্তি পাওয়ার পর ছেলেদের নিয়ে তার বাসাতেই ছিলেন মিনু। কিন্তু মেয়ের মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না, খুব কান্নাকাটি করতেন। গত ২৮ জুন সকালে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যান। পরের দুদিন তাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও পাননি।
বায়েজিদ থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ট্রাক চাপায় আহত হওয়ার পর ভোর ৫টার দিকে মারা যান মিনু। কিন্তু তার পরিচয় তখন জানা যায়নি। গতকাল উনার পরিচয় আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ নেওয়া হয়েছে। কোন গাড়ি তাকে চাপা দিয়েছে তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ওসি বলেন, ঘটনার রাতে সেখানকার টহল পুলিশ ২-৩ বার উনাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। তারপরও তিনি বারবার লাফিয়ে রাস্তায় নামছিলেন। উনার হাঁটাচলা স্বাভাবিক ছিল না।